Ticker

100/recent/ticker-posts

তারিখ ও সময়

[ | | ]

‘নিয়ত’ কিভাবে করতে হবে?


নিয়ত শব্দের অর্থ হচ্ছে “কোন কাজ করতে ইচ্ছা করা” বা “সংকল্প করা”। নিয়ত করতে হবে অন্তরে, মুখে উচ্চারণ করে দোয়া পড়ে নয়। নিয়ত করার জন্য কোনো দুয়া পড়তে হবেনা বা মুখে উচ্চারণ করে কিছু বলতে হবেনা।
সালাতের নিয়ত করার জন্যেঃ
আপনি কোন ওয়াক্তের কত রাকাত (২/৩/৪), কি সালাত (ফরয, সুন্নত নাকি নফল সালাত) পড়ছেন, অন্তরে শুধুমাত্র এই ধারণা বা ইচ্ছাটুকু থাকলেই আপনার নিয়ত করা হয়ে যাবে। প্রত্যেক কাজের শুরুতে এইরকম অন্তরে নিয়ত করে নেওয়া “ফরয”।
যে কোনো ইবাদত বা আমলের পূর্বে এইভাবে নিয়ত না করলে, সেটা ইবাদত হিসেবে কবুল করা হয়না। কিন্তু নিয়তের জন্যে মুখে “নাওয়াইতুআন উসালিল্লাহি তাআ’লা...” এই দোয়া পড়ে বা মুখে উচ্চারণ করে যে নিয়ত পড়া হয়, সেটা হচ্ছে বেদাত। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এইভাবে দুয়া করতেন না। মনে রাখবেন, আমলের পূর্বে অন্তরে নিয়ত “করা” ফরয, কিন্তু মুখে উচ্চারণ করে নাওয়াইতু দুয়া “পড়া” নিয়ত করা বেদাত।
ধরুন কেউ একজনকে টাকা-পয়সা দান করলো, কিন্তু এই টাকা দেওয়ার পূর্বে সে আল্লাহর কাছে কোনো সওয়াব বা প্রতিদান পাওয়ার আশা করলোনা, তার মানে হলো সে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য “নিয়ত” (ইচ্ছা) করে নাই। তাই আল্লাহ তাআ’লা তাকে কোনো সওয়াব দেবেন না। কিন্তু সে যদি দান করা বা যেকোনো নেক আমলের পূর্বে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিয়ত করে, তাহলেই কেবলমাত্র সে এর বিনিময়ে সওয়াব বা প্রতিদান পাবে। আবার সে যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির সাথে অন্য কাউকে খুশি করা, মানুষের মাঝে নিজের সুনাম ছড়ানো, এমন উদ্দেশ্যে করে, সেটা হচ্ছে ‘রিয়া’ এবং এটা এক প্রকার শিরক। রিয়ার কারণে আল্লাহ ঐ আমল কবুল করেন না, বরং এই পাপের কারণে সে তোওবা না করলে শাস্তি পাবে।
.
সালাতের নিয়ত কিভাবে করতে হবে? 
আপনি যখন ওযু করছেন তখন আপনার মনে ইচ্ছা থাকে যে আপনি সালাত পড়বেন। এই যে আপনি ইচ্ছা করলেন অথবা মনে মনে চিন্তা করলে সালাত পড়ার জন্য, এটাই হচ্ছে আপনার নিয়ত। আর যখন জায়নামাযে দাড়াবেন সালাত পড়ার জন্য, তখন শুধু আপনি মনে মনে ঠিক করে নেবেন, এটা কি আপনার সুন্নত সালাত, নাকি ফরয সালাত? যদি কোনো সুন্নত সালাত পড়েন তাহলে, মনে মনে ঠিক করে নেবেন যে, এটা সুন্নত সালাত। এর পরে “আল্লাহু আকবার” তাকবীর দিয়ে বুকের উপর হাত বাঁধবেন। আপনি এভাবেই সালাত শুরু করবেন। এরপরে যদি ফরয সালাত পড়তে চান, তাহলে তার আগে মনে মনে ঠিক করে নেবেন, এটা আমার ফরয সালাত।
আমাদের দেশের প্রচলিত বাগদাদী কায়দায় দেওয়া “নাওয়াইতুয়ান উসা লিল্লাহি তাআ’লা...” এইরকম নিয়তের দুয়া কুরআন ও হাদীসের কোথাও নাই, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এই দুয়া পড়ে নিয়ত করতেন না। এটা আমাদের দেশীয় হুজুর এবং মাওলানা সাহেবরা বানিয়ে নিয়েছেন, যা বিদআ’ত অর্থাৎ, দ্বীনের মাঝে নতুন একটা আবিষ্কার। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে তাঁর মতো সালাত পড়তে আদেশ করেছেন (সহীহ বুখারী), হুজুর মাওলানা সাহেবের বানানো তরীকায় সালাত পড়তে বলেন নাই।
.
রোযার নিয়ত কিভাবে করতে হবে?
রমযান মাসে রোযা থাকা ফরয। রাতের বেলা আপনার যদি নিয়ত থাকে যে, আজকের দিনে আপনি রোযা থাকবেন, অথবা সাহরীর সময় উঠে খাওয়া-দাওয়া করেন এবং মনে মনে চিন্তা করেন যে, আজ রোযা থাকার, তাহলেই আপনার নিয়ত করা হয়ে যাবে।
রোযার নিয়ত হিসেবে সাহরী ও ইফতারির ক্যালেন্ডার বা বিভিন্ন ধর্মীয় বই-পুস্তকে যে দুয়া “নাওয়াইতুয়ান আসামু গাদামান...”, এই দুয়া কুরআন ও হাদীসের কোথাও নাই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এই দুয়া পড়ে রোযার নিয়ত করতেন না। এটা আমাদের দেশীয় মাওলানা সাহেবরা বানিয়ে নিয়েছেন, যা সুস্পষ্ট বিদআ’ত। আর বিদআ’ত মানেই হলো পথভ্রষ্টতা ও বাতিল।
রমযানের রোযার বাইরে আপনি যখন অন্য নফল, সুন্নত অথবা কাযা রোযা রাখবেন তখন আপনি রাতের বেলা বা ঘুম থেকে উঠে সাহরী খাওয়ার পরে মনে মনে ঠিক করে নেবেন, আমি আজ অমুক রোযা (বৃহস্পতিবারের সুন্নত রোযা/বিগত রমযানের কাযা রোযা/আরাফার সুন্নত রোযা) রাখবো।
উল্লেখ্যঃ নফল/সুন্নত রোযার জন্য কেউ যদি আগে থেকে নিয়ত করে না রাখেন, আর ঘুম থেকে উঠে ফযরের ওয়াক্ত হয়ে যাওয়ার পরেও রোযা থাকার নিয়ত করতে পারবে। তবে যত সময় পরে করবেন, ঐ সময়টকুর জন্য নিয়ত না থাকায় ততটুকু অংশের সওয়াব মিস করবেন।
আপনি এভাবেই নামায ও রোযার জন্য নিয়ত করবেন।

Post a Comment

0 Comments