Ticker

100/recent/ticker-posts

তারিখ ও সময়

[ | | ]

সালাফি আখলাফ(চরিত্র)------

আসসালা-মু 'আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু।


সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা-র জন্য এবং অসংখ্য সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশেষ নাবী ও রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ-এর প্রতি।

 রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: ,إِنَّ الْهَدْىَ الصَّالِحَ، وَالسَّمْتَ الصَّالِحَ، وَالاِقْتِصَادَ جُزْءٌ مِنْ خَمْسَةٍ وَعِشْرِيْنَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ- 
‘নিশ্চয়ই উত্তম চরিত্র, ভাল ব্যবহার ও পরিমিত ব্যয় বা মধ্যপন্থা অবলম্বন করা নবুয়তের পঁচিশ ভাগের এক ভাগ’।

 রাসুলুল্লাহ ﷺ আরও বলেছেন:
বান্দাদের ভিতরে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় বান্দা হল সেই ব্যক্তি যার আখলাক উত্তম।
📚 [তাবরানী]
শাইখ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

প্রিয় সালাফী ভাই ও বোনেরা,
সর্বপ্রথম নিজের প্রতি, পরে আপনাদের প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে দু'টো কথা বলা প্রয়োজনবোধ করছি!

আপনারা অনেকেই হয়ত অনলাইনে অথবা অফলাইনে নিয়মিত দাওয়াতী কাজ করেন বা এখনো করছেন!
কেউবা অনলাইনে লিখালিখির মাধ্যমে,কেউবা উলামাদের বইগুলো অনুবাদের মাধ্যমে,কেউবা বই রচনার মাধ্যমে আবার কেউ হয়তবা মাঠে-ময়দানে সরাসরি দাওয়াহ দেওয়ার মাধ্যমে!
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা ও তার নাবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ ﷺ এর কথা দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রচার করার এই "দাওয়াহ" অব্যাহত থাকুক সেটাই কাম্য!

উত্তম আখলাকে বলীয়ান হয়ে একজন দ্বায়ী সর্বোত্তম বাণী প্রচারে নিজেকে নিয়োজিত করবেন, যেখানে থাকবে না কোন ব্যক্তি স্বার্থ, থাকবে না দুনিয়াবী কোন ফায়দা হাসিলের চেস্টা , থাকবে না নিজেকে অন্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ভাবার মত দাম্ভিকতা ! এই মানসিকতা যাদের মধ্যে রয়েছে তারাই কেবল অনলাইনে ও অফলাইনে দাওয়াতি কাজে সফলতা অর্জন করতে পেরেছে!

এখানে উত্তম আখলাক বলতে সকলের সাথে (হোক সে আপনার মতের বিরোধী) সদাচরণ করা, খারাপ আচরণের প্রত্যুত্তরে ভালো আচরণ করা, জুলুম না করা,সত্য কথা বলা, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা , ওয়াদার বরখেলাফ না করা, আমানত রক্ষা করা, বিনয়ী হওয়া, নম্র-ভদ্র, মার্জিত ভাষায় কথা বলা, উগ্র মেজাজী বা কটু কথা না বলাসহ ইত্যাদি যতগুলো গুণ রয়েছে সবগুলোই এতে শামিল।

 ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
كانوا يتعلمون الهدي كما يتعلمون العلم
‘তারা (সালাফগণ) যেমন ইলম শিক্ষা করতেন তেমনি আচার-আচরণও শিক্ষা করতেন।
📚[আলজামি লিআখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামে, খতীব বাগদাদী ১/৭৯]

■ এক,

আমরা সালাফদের অনুসারী হিসেবে নিজেকে সর্বদা সালাফী মাসলাকের দিকে নেসবত করে প্রাউডফিল করি অথচ আদতে আমাদের অনেক ভাই (,হয়ত তাদের দলে আমিও শামিল) আক্বীদায় সালাফী হলেও এখনো পর্যন্ত আখলাকে সালাফী হতে পারেন নি! যারফলে হকের দিকে আহবানকারী হওয়া সত্ত্বেও ঘৃনার পাত্রে পরিনত হচ্ছেন!
.
"আমি যে সালাফী এইজন্যে আমাকে প্রমাণ করতে হবে আপনি ভ্রান্ত মানহাজি" বর্তমানে অতি উৎসাহি একদল যুবক এই অভিনব পন্থায় অনলাইনে দাওয়াতি কাজ করছেন! নিজের অপছন্দের উলামাদের ছিদ্রান্বেষণ করা, গোয়েন্দাগিরি করা, সুপ্তদোষ অনুসন্ধান করা, শত্রুতা পোষণ করা , হিংসা করা, সর্বদা পিছনে লেগে থাকার মধ্যেই তারা "দ্বীনের দাওয়াহ"কে সীমাবদ্ব করে ফেলেছেন! এরা নসীহাহ এবং বেইজ্জতি দুটোকে সমার্থক হিসাবে বেছে নিয়েছে!
এটা সালাফদের নীতি নয় যে, আপনি কারো ভুল সবার সামনে উম্মুক্ত করে তারপর তাকে উপদেশ দিবেন অথচ সেটা আক্বিদা কিংবা মানহাজগত ভুল নয়!

 আল্লামাহ ড. সালিহ আল-ফাউজান হা'ফিজাহুল্লাহ বলেছেন,
"আজকাল এক শ্রেণীর মুসলিম বিশেষ করে যুবকদের মাঝে ইসলামের বিষয়ে মাত্রাতিরিক্ত আবেগ ও অতি উৎসাহ দেখা যায়। অথচ ইসলামের হাকীকত সম্পর্কে তাদের গভীর জ্ঞান নেই। তাদের মধ্যে আশংকাজনক হারে মানুষকে কাফের, ফাসেক কিংবা বিদআ'তী বলে মন্তব্য করার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এসব যুবকের জীবনের অন্যতম ব্রতই যেন কারো ছিদ্রান্বেষণ ও দোষ-ত্রুটি আবিস্কার করা এবং সেগুলো প্রচার করে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া। এটা ফিৎনা ও অকল্যানের আলামত।
আল্লাহ সুবহা-নাহু ওয়া তাআলা'র নিকট দুআ' করি, মুসলিমদের যেন এই অকল্যান থেকে হেফাজত করেন এবং মুসলিম যুবকদের সঠিক পথের দিশা দান করেন। তাদেরকে সালাফে সালেহের নীতি ও পদ্ধতি মতো চলার তাউফীক দান করেন এবং অকল্যানের পথে আহবানকারীদের থেকে যেন তাদের দুরে রাখেন।"
📚 তাকফীর ও তার নীতিমালা, পৃষ্ঠা ১১।

.
■ দুই,

কারো আচরণগত সমস্যা, বদরাগী স্বভাব, কোন বিষয়ে বুঝের ভুল, ইখতেলাফি বিষয়ে কোন একটি মতকে আকড়ে ধরে রাখা এসব ব্যাপারে আপনি তাকে নির্জনে এককভাবে উপদেশ দিন! তার ত্রুটিগুলো উপস্থাপনের আগেই ক্ষমা চেয়ে নিন যেন তিনি ভুল না বুঝেন! আর যদি ঔলোকের দিকে আগানোর সাহস না পান, তাহলে তার একজন ঘনিষ্ট লোককে বলুন, যে তাকে উপদেশ দিতে সক্ষম! কিন্তু হাল ছেড়ে দিবেন না। মধ্যপন্থা নিতে হবে, উপদেশ না দিয়ে যেমন ছেড়ে দেওয়া যাবেনা, তেমনিভাবে উপদেশ দিয়েও মানহানী করা যাবেনা!

যদি আমাকে দিয়েও এমনটা হয়ে যায়, তবে আমি নিজেকে যতই সালাফী দাবি করি না কেন অথবা আমার দাওয়াহ এর মান যতই ভাল হোক না কেন, তার দ্বারা আমার একাউন্টে কোন সাওয়াব জমা হবে না।

 ঈমাম নাছির উদ্দিন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,

الحق ثقيل فلا نثقله بأسلبونا

‘হক স্বভাবতই ভারী। সুতরাং আমরা আমাদের পদ্ধতি দ্বারা (দাওয়াতী ময়দানে কঠোরতা অবলম্বন করে) তাকে আরো ভারী করতে পারি না’।
📚 [আত-তাছফিয়াহ ওয়াত তারবিয়াহ ]

■ তিন,

কিছুদিন আগে একজন দ্বীনী ভাইয়ের সাথে কথা হচ্ছিল যিনি একসময়ে স্বনামধন্য ব্যবসায়ী ছিলেন!
কথায় এক পর্যায়ে আফসোস করে বললেন, "আমাদের দ্বীনী ভাইদের (বিশেষ করে সালাফী) আখলাক দিনকে দিন কতটা নিচুস্তরে চলে গেছে তা আপনি লেনদেন বা একত্রে বিজনেস না করলে বুঝতে পারবেন না"!

একথা সত্য যে, ঠকবাজী, ধোকা দেওয়া , মিথ্যে বলা, দ্বীন বিক্রি করে খাওয়া কিংবা দ্বীনের লেবাসে অন্যের হক মেরে দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরাও কম যাই না অথচ আমরা দাবিতে " সালাফী"!
আশ্চর্য!

শুধু লেনদেনই নয় বরং এরকম বহু সেক্টর যেমনঃ
স্ত্রী, মা বাবা ,বন্ধুমহল, পাড়া পড়শী কিংবা ভিন্ন
মতালম্বী আলেম বা দ্বীনী ভাইয়ের সাথেও আমাদের আচার আচরণে এমনটা পরিলক্ষিত হয়!

 সালাফী দাওয়াতের ক্ষেত্রে এসকল রোগের সংক্রমণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে ঈমাম নাছির উদ্দিন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,

"আমাদের মাঝে কিছু ব্যক্তি রয়েছেন, যারা আক্বীদাগত দিক থেকে সালাফী মানহাজকে গ্রহণ করেছেন, কিন্তু দুঃখজনকভাবে চারিত্রিক দিক দিয়ে তারা মোটেও সালাফী নন"!
📚 [আত-তাছফিয়াহ ওয়াত তারবিয়াহ ]

 তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেন,

كنت أظن بأن مشكلة المسلمين عقائدية فقط، فتبين لي فيما بعد بأنها أخلاقية أيضا ‘

আমি ধারণা করতাম মুসলমানদের সমস্যা কেবলমাত্র আক্বীদাগত। কিন্তু এখন আমার কাছে স্পষ্ট যে, এর সাথে নৈতিক বা চারিত্রিক সমস্যাও একটি বড় সমস্যা’।
📚 [আত-তাছফিয়াহ ওয়াত তারবিয়াহ ]

❒ শেষ কথাঃ

আমরা কেউই শতভাগ নির্ভুল নই এবং তা সম্ভবও নয়। ভুল ভ্রান্তিকে নিরন্তর সংশোধনের মধ্য দিয়েই আমাদেরকে জীবন অতিবাহিত করতে হবে।
আল্লাহতালা আমাদের হৃদয়গুলোকে হিংসা বিদ্বেষ, রিয়া, অহংকার, গীবত, অপবাদ, অধিক ধারণা থেকে পবিত্র রাখেন এবং আমাদেরকে আখলাকে সালাফী হওয়ার তাউফ্বিক দেন। [আ-মীন]
প্রিয় নাবী মুহাম্মদূর রাসুলুল্লাহ ﷺ এর একটি দু'য়া দিয়েই শেষ করছি..

اللهم حسنت خلقي فحسن خلقي'

(আল্লাহুম্মা হাসসান তা খলকী ফাহাস সীন খুলুকী)।"

হে আল্লাহ আপনি আপনার সৃষ্টিকে যেমন সুন্দর করেছেন, তেমনি আমার চরিত্রকেও সুন্দর করে দিন।
📚[ আহমাদ,সহিহুল জামি - ১৩০৭ নং ]


❒ আল্লাহর গুনাহগার বান্দা
আপনাদের দ্বীনী ভাই,
আখতার বিন আমীর।

Post a Comment

0 Comments