Ticker

100/recent/ticker-posts

তারিখ ও সময়

[ | | ]

❒ কে এই ইবনে সিনা ?

❒ ইবনে সিনা কে? 
---------------------------
❒ ভূমিকা

আপনি যদি ধর্মে বিশ্বাসী কিংবা আস্তিক হন এবং আপনি সমমনা সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো থেকে শুরু করে
মুসলিম নামধারী বিশেষ ব্যক্তিবর্গের আপত্তিকর কর্মকান্ডের যেকোন কিছুরই সমালোচনা করেন না কেন, আপনাকে অবধারিত ভাবেই ইসলাম বিদ্বেষী ষড়যন্ত্রকারী বলা হবে। এমনকি আপনি যদি ইতিহাসের কোন ভুল তথ্য সঠিক করে দেন তাতেও রেহাই নাই।
খুব সম্ববত এইজন্যই মধ্য যুগীয় স্বনামধন্য মুসলিম বিজ্ঞানীদের ইশ্বর ধারণার সাথে যে কোরআনের ইশ্বর ধারণার খুব কমই মিল আছে সেকথা বললেও অবধারিতভাবে আপনাকে ট্যাগ করা হবে ইসলাম বিদ্বেষী হিসাবে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, মুসলিম নামধারী বিজ্ঞানীরা প্রায় সবাই ইসলামে বিদ্বেষী ছিলেন হাতে গোণা দুই একজন ছাড়া! অন্যদিকে জন্মসূত্রে অমুসলিম বিজ্ঞানীরা কেউই তাঁদের ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন না, কেউ কেউ হয়ত নামকাওয়াস্তে আস্তিক ছিলেন। এই বাস্তবতাটা একশ্রেণীর লোক মেনে নিতে পারছে না তাদের অন্ধ ভক্তির জন্য!
আজকে তেমনি একজন কথিত মুসলিম (!) দার্শনিক সম্পর্কে আলোচনা করব (ইনশা আল্লাহ) যার নাম হচ্ছে "ইবনে সিনা"!

❒ কে এই ইবনে সিনাঃ

ইবনে সিনা ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে উজবেকিস্তানের বিখ্যাত শহর বোখারার নিকটবর্তী আফসানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এই বোখারা শহরটি সে সময় ছিল পারস্য সাম্রাজ্যের অধীন। আর ইবনে সিনার বাবা আব্দুল্লাহ ছিলেন পারস্য তথা ইরানের খোরাসান প্রদেশের শাসক। ইবনে সিনার আসল নাম আবু আলী আল হোসাইন ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে সিনা। তবে তিনি ইবনে সিনা, বু-আলী সিনা এবং আবু আলী সিনা নামেই বেশী পরিচিত।

ইবনে সিনার বয়স যখন ২২ বছর তখন তার পিতা আব্দুল্লাহ ১০০১ সালে ইন্তেকাল করেন। বাপের পরেই তিনি খোরাসানের শাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু তিনি বেশী দিন খোরাসানের শাসনকর্তার পদে থাকতে পারেন নি! কারণ গজনীর সুলতান মাহমুদ রাহিমাহুল্লাহ সেই সময় প্রবল আক্রমণ করে খোরাসান দখল করে নেন। ফলে ১০০৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি খাওয়ারিজমে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন।

ইবনে সিনা ছিল এক ইসমাইলি শিয়া পরিবারের সন্তান। বংশীয়ভাবে তিনি ছিলেন একজন ইস্মাইলি শিয়া! তিনি প্রথম গনিত শাস্ত্র শিখেন ভারতীয় একজন ফল বিক্রেতার কাছে। তারপর একটু বড় হবার পরেই পড়তে শুরু করলেন অ্যারিস্টটলের ‘মেটাফিজিক্স’; । এরপর দর্শনের পোকা ঢুকে যায় তার মাথায়। পরের দেড় বছর অনেক কিছুই পড়লেন তিনি। তারপর ১৬ বছর বয়স থেকে ডাক্তারির নেশা জাগে তাঁর। পড়তে শুরু করেন আর আবিস্কার করতে থাকেন নতুন নতুন চিকিৎসার উপায়।

মুসলিম চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত (যদিও মুসলিম নন) ইবনে সিনার নামে এদেশে বেশ কিছু হাসপাতাল রয়েছে। একদল লোকের মাথায় মনি হল এই "ইবনে সিনা"! অথচ উলামাদের সুবিন্যাস্ত ফাতওয়া রয়েছে যে, স্কুল-কলেজ কিংবা হাসপাতাল ইত্যাদির ইবনে সিনার নামে নামকরণ করা যাবে না! কারণ তিনি ছিলেন একজন নাস্থিক! তার ভিবিন্ন বইতে নাস্তিকতার দর্শন প্রকাশ পাওয়ায় সেই সময়কার উলামাগন দীর্ঘ গবেষণার পর তাকে সর্বসম্মতিক্রমে "কাফির" ফাতওয়া দিয়েছেন।

❒ ইবনে সিনার আক্বীদা বা ধর্মীয় বিশ্বাসঃ

 ইবনে সিনার দৃস্টিতে আল্লাহ বা সৃস্টিকর্তা :

ইবনে সিনার বাবা ছিলেন তুরস্কের বলক প্রদেশের এবং একজন ইসমাইলী শিয়া! ধর্মতাত্ত্বিক এবং দার্শনিক চিন্তাভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক দিক থেকেই তিনি ছিলেন কোরআনের মৌলিক বিশ্বাসের পরিপন্থী।

ইবনে সিনার (৯৮০ খৃঃ - ১০৩৭ খৃঃ) সময় আরবীয় দর্শন এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌছায়। তাকে একাধারে দর্শন এবং চিকিৎসা শাস্ত্রের রাজপুত্র নামে অভিহিত করা হত। পশ্চিমের এরিষ্টটল, প্লেটো, নব্য প্লেটোবাদ, এবং স্টয়িক দর্শনের উপর ব্যপক জ্ঞানার্জন করেন তিনি এবং একই সাথে প্রাচ্যের মনিষীদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং কাঠামো সম্পর্কেও ব্যাপক ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। কিন্তু এগুলোর কোনটিকেই তিনি পুরোপুরি ভাবে মেনে চলতেন না বা অণুসরণ করতেন না। তবে সবগুলো বিশ্বাস থেকেই কিছু কিছু উপাদান নিয়ে নিজস্ব একটি বিশ্বাসের ভিত্তি গড়ে তুলেছিলেন। তার সেই ধর্মীয় বিশ্বাসে ইশ্বর (আল্লাহ) মানুষ, এবং এই মহাবিশ্বের সবকিছু পরস্পরের উপর নির্ভরশীল বা মুখাপেক্ষী ছিলো না।

তিনি বিশ্বাস করতেন মানুষ এবং সৃষ্টিকর্তা পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত হলেও মানুষ সৃষ্টিকর্তা বা আল্লাহ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। আল্লাহ মানুষের সাথে সরাসরি কোন যোগাযোগ রাখেন না এবং বিশ্বটাকে নিয়ন্ত্রণ করেন না। ইবনে সিনার সাথে এরিষ্টটলের ইশ্বরের পার্থক্য আছে। এরিষ্টটলের ইশ্বর এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেননি এবং এটা নিয়ে তার কোন মাথা ব্যাথাও নেই। ইবনে সিনার ইশ্বর (আল্লাহ) মধ্যপ্রাচ্যীয় ইশ্বর (Semitic - আরব, হিব্রু, আসীরিয়, ফিনীসিয় ইত্যাদী) কিন্তু তার নিজস্ব দর্শন দ্বারা পুনঃনির্মিত ইশ্বর। তার আল্লাহর গুনাবলীর যৌক্তিক ব্যাখ্যা এবং সৃষ্টিশীলতার সাথে স্পস্টতই কোরআনের আল্লাহর গুনাবলীর যৌক্তিক ব্যাখ্যা এবং সৃষ্টিশীলতার পার্থক্য রয়েছে।

❒ ইবনে সিনার বিশ্বাসের সাথে কোরআনের বিশ্বাসের সংঘর্ষ যেখানেঃ

১. মানুষ এবং মহাবিশ্বের সৃষ্টিঃ

ইবনে সিনার মতে এ বিশ্বের কোনকিছুই শূণ্য থেকে (Ex Nihilo) সৃষ্টি হয়নি। পদার্থের শুরু কিংবা শেষ নাই.... পদার্থ চিরন্তন এবং জগতের সৃষ্টি সময় এবং স্হান দ্বারা সীমাবদ্ধ নয় - এই জগতের কোন শুরু নেই এবং কোন শেষও নেই। কোরআনের বিশ্বাস অনুযায়ী আল্লাহ সবকিছুই শূণ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন এই মতবাদ তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। বরঞ্চ এ জগৎ তার ইচ্ছাশক্তির ফলস্বরুপ তার সত্বা থেকে বিকিরিত। সক্রিয় বুদ্ধিমত্তা সর্বপ্রথম বিকিরিত হয়, এরপর আত্মা এবং সর্বশেষ দেহ। সৃষ্টিকর্তা সরাসরি তার সৃষ্টির সাথে কোন যোগাযোগ রাখেন না। আল্লাহ যতদিন ধরে আছে, এই জগতের অস্তিত্বও তত দিনকার।

"আল্লাহ এ বিশ্বকে কোন এক বিশেষ সময়ে সৃষ্টি করেছেন" তিনি এ মতের বিরোধী ছিলেন।
তিনি মনে করেন, এ বিশ্ব পরম স্রষ্টা থেকে আদি বুদ্ধি এবং অন্যান্য বুদ্ধির মধ্য দিয়ে বিকির্ণ হয়ে অনন্তকাল ধরে বিরাজমান রয়েছে। তিনি আরো বলেন সর্বত্র বিরাজিত পরম সত্বা এমন কোন সুশৃঙ্খল এবং মঙ্গলকর বিশ্ব সৃষ্টি করবেন না যেটা তার স্হায়িত্বকে সময়ের প্রেক্ষিতে অতিক্রম করতে সক্ষম নয়!

এইজন্যই ইমাম গাজালী রাহিমাহুল্লাহ তাকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, আল্লাহ যদি একমাত্র স্বাধীন অমূখাপেক্ষী সত্ত্বা হন তবে বিশ্বকে তার পরেই সৃষ্ট হতে হবে, তা অস্তিত্ব ও সময় - দুটোরই মানদন্ডে। সুতরাং তা অনাদি-অনন্ত হতে পারে না। এই দর্শনকে কুফরী বলে আখ্যায়িত করেছেন ইমাম গাজালী (রাহঃ)।

২. আল্লাহর স্বরুপ এবং তার সর্বজ্ঞানঃ

ইবনে সিনার মতে আল্লাহর স্বরুপ খুবই সাধারণ। তিনি আল্লাহর বিশুদ্ধ একক সত্তায় বিশ্বাস করতেন। তাঁকে অস্তিত্ব সম্পর্কিত দর্শনের কোন শব্দাবলী বা বৈশিষ্ট্য দিয়ে চিহ্নিত করা যাবে না এবং তাঁকে বিভিন্ন গুণাবলী দিয়ে প্রকাশ করার চেষ্টা হলো তাঁর একত্ববাদের স্পষ্ট লংঘন। মুতাজিলাদের মতোই তিনি আল্লাহর একক সত্তায় তাঁর আলাদা আলাদা গুনের অস্তিত্বকে অস্বীকার করেন। অপরদিকে কোরআন অনুযায়ী আল্লাহ বিভিন্ন গুনাবলীর অধিকারী এবং তার প্রায় শ'খানেক নাম আছে। ইবনে সিনা যে আল্লাহর কথা বলেন সে আল্লাহ এক পরম, বিশুদ্ধ একক স্রষ্টা, আমাদের পার্থিক জগতের তুলনায় সেই স্রষ্টা বিকারহীন এক সত্ত্বা। সমগ্র বিশ্ব সেই স্রষ্টার জ্ঞান প্রক্রিয়ার ফলাফল!

ইবনে সিনার মতে আল্লাহ এ পৃথিবীর সবকিছু সম্পর্কেই একটা সামগ্রিক ধারণা রাখেন কিন্তু পুঙ্খানুপুঙ্খু জ্ঞান রাখেন না (!) যেহেতু স্রষ্টার জ্ঞান প্রক্রিয়ার ফলাফল এই বিশ্ব, সুতরাং সার্বিক বস্তু যেমন গ্রহ, সূর্য, তারা, গাছ, মাছ, মানুষ এইরকম সার্বিক বস্তু সম্পর্কে স্রষ্টা সচেতন এবং এগুলো তার সার্বিক জ্ঞানের অংশ। কিন্তু স্রষ্টা সার্বিক ‘মানুষ’ সম্বন্ধে জ্ঞান রাখলেও তিনি বিশেষ কোন ব্যক্তিবিশেষ যেমন ‘ইবনে সিনা’, বা "হোরাস" সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখেন না। ‘মানুষ’ তার জ্ঞান চিন্তার ফসল! এই কারণে মানুষ কি তা তিনি জানেন কিন্তু ইবনে সিনাকে তিনি চেনেন না।

৩. মৃত্যু পরবর্তী দৈহিক পুনুরুত্থানঃ

ইবনে সিনার মতানুসারে মানুষ আত্মা এবং দেহের সমন্বয়ে গঠিত। তবে কোরআনে স্পষ্টভাষায় মৃত্যুপরবর্তী দৈহিক পুনুরুত্থানের যে বর্ণনা দেয়া আছে সুনির্দিষ্টভাবে তিনি তা অস্বীকার করেছেন। তার মতে কোরআনের বর্ণনা অনুসারে দৈহিক পুনুরুত্থান সম্ভব নয় এবং তা যৌক্তিকভাবে ব্যাখা করাও সম্ভব নয়। তিনি আত্মার একত্বে বিশ্বাস করতেন। তার মতে, মৃত্যুর পরে পুণ্যাত্মা ফিরে যাবে বুদ্ধির জগতে, এই পর্যায়ে আত্মা আপন বিচ্ছিন্ন অস্তিত্ব হারিয়ে শাস্বত বুদ্ধিজগতের সাথে একাত্মতা লাভ করবে।

৪. নবীদের বা নবুয়্যাত সম্পর্কিত ধারণার সংঘর্ষঃ

নবুয়্যাত প্রাপ্তি সম্পর্কে ইসলামের ধারণাকে তিনি নামেমাত্রে স্বীকার করে নিয়েছেন। কিন্তু তিনি নিজের মত করে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কোরআনের নবী-রাসুলরা প্রত্যেকেই প্রেরিত পুরুষ, অনেকেই আসমানী কিতাব প্রাপ্ত। অনেকের সাথেই জিব্রাইল আলাইহিস সালাম সরাসরি যোগাযগ করত!

ইবনে সিনার মতে নবীরা আল্লাহর মুখপাত্র হিসাবে অর্পিত (Endowed) এবং মনোনীত/আদেশপ্রাপ্ত (Ordained) নন। আসলে তারা মানবীয় গুণাবলীর অধিকারী সাধারণ মানুষ যারা কিনা সমাজের চলমান সমস্যা সমাধানের জন্য সমাজেরই সৃষ্টি। সমাজে কিছু মানুষ থাকে যাদের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং নৈতিকতার ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় বেশী থাকে। এই নেতা-নবীর উচ্চতর অন্তর্জ্ঞান (Intuition) ক্ষমতার সুবিধা থাকার কারণে গোত্রের কিংবা সমাজের প্রয়োজন এবং সমস্যাগুলো ভাল বুঝতে পারেন। এইসব সমস্যার সমাধানে তার প্রখর কল্পনা শক্তি তাকে সাহায্য করে এবং তার বক্তব্য সাধারণ মানুষদের সফলভাবে বোঝানোর ক্ষমতা থাকে এবং তাদের মাঝে প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা থাকে। তার বক্তব্যের রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট থাকে। হয়ত তার পক্ষে সক্রিয় বুধিমত্তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হলেও হতে পারে। সেই সক্রিয় বুদ্ধিমত্তা হতে পারে সম্ভাব্য, বাস্তব কিংবা আরোহিত বুদ্ধিমত্তা যাকে খ্রীস্টানদের 'হোলিকোস্ট' কিংবা ইহুদী-মুসলমানদের জিব্রাইলের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। তবে নবীদের সেই জ্ঞান তার নিজস্ব উপলব্ধীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। সাধারণ মানুষের বোধগম্যতার কথা মাথায় রেখে নবী তাকে রুপক কিংবা প্রতিকী ভাষায় সাধারণ্যে উপস্হাপন করেন। আর সাধারন মানুষেরা সেটাকেই আক্ষরিক অর্থে ধরে নেয়। কিন্তু জ্ঞানী মানুষেরা কখনও তা করে না!

৫. সূফীবাদঃ

ইবনে সিনার সবচাইতে উল্লেখযোগ্য দর্শনের বই হচ্ছে আল-সিফা (নিরাময় - The Cure)। এটা সম্ভবত একজন মানুষের লেখা দর্শনের উপর সবচাইতে বড় বই। এতে যুক্তি, পদার্থ বিদ্যা, অধি বিদ্যা, ভূ-তত্ব, জলবায়ু বিদ্যা, উদ্ভিদ বিদ্যা, প্রাণী বিদ্যা, গণিত এবং মনবিদ্যা স্হান পেয়েছে। তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য দর্শেনর বই আল ইশারাত ওয়া আল তামজিহাদ (Direction and Notices)। তিনি সুফিবাদের উপর তিনটি অধ্যায় এই বইতে লিখেছেন। সুফিবাদের উপর তার আরও ৩২টির মত প্রবন্ধ/নিবন্ধ আছে। শুধুমাত্র পার্থিব জগতের ভোগ-লালসা থেকে বিরত থাকাটাই তার কাছে যথেষ্ঠ মনে হয়নি। তিনি মনে করতেন জ্ঞানের চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌছানোর জন্য উদ্ভাসনের (Illumination) চেষ্টা করা উচিৎ। আর উদ্ভাসন সম্ভব জাগতিক এবং মহাজাগতিক জগতের মধ্যে সংযোগ স্হাপনের মাধ্যমে। উদ্ভাসনের এই তত্বটি নিকট প্রাচ্য (পারস্য) এবং নব্য প্লেটোনিক (গ্রীক) মতবাদের বিভিন্ন উপাদানের সংমিশ্রণ। আর এরই মাধ্যমে ইবনে সিনা সূফীবাদের এক নতুন ধারার সৃষ্টি করেন যা হিকমত আল ইশরাক (The illuminative one) নামে পরিচিত। তার ভাবশিষ্য আল সাহরোয়ার্দি পরবর্তিকালে সূফীবাদের এই শাখাটির প্রচার এবং প্রসার ঘটান।

৬. একমাত্র আল্লাহই সবকিছুর নিয়ন্ত্রক:

ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী আল্লাহ হলেন যা কিছু ঘটে তার একমাত্র কার্যকরণ। কোরআনে সুরা আল ইমরানের আয়াত নাম্বার ২৬-২৭ এ কথা পরিস্কার ভাবে বলা আছে। "আল্লাহ ছাড়া আর কারও পক্ষে কোন কিছু ঘটানো সম্ভব নয়" ইবনে সিনা এই মতের বিরুদ্ধে ছিলেন। তার অধিবিদ্যা সম্পর্কিত ব্যাখ্যা অনুযায়ী মানুষ এবং অন্য প্রাণী কিংবা এমনকি জড়বস্তুও আল্লাহর সাহায্য ছাড়াই কোন কিছুর সংঘটনের কারণ হতে পারে।

এছাড়াও কোরআনে পরিষ্কার ভাবেই বলা আছে মানুষের জীবনে যা কিছু ঘটে তার নিয়ন্ত্রক আল্লাহ। ইবনে সিনা একজন যুক্তিবাদী হিসাবে এই তত্ব প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন মানুষ নিজেই নিজের কর্মের নিয়ন্ত্রক!

৭. দুটি জিনিষের উপর ইবনে সিনার আকর্ষণ, মোহ ছিলো সর্বজনবিদিত - তার একটি হল ক্রীতদাসী এবং অপরটি মদ! মদ্যপান ইসলাম ধর্ম' মতে কঠোরভাবে নিষেধ। মদের প্রতি তার আকর্ষণের যে ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন সেটা খুবই চিত্তাকর্ষক। তিনি বলেছেন ধর্মীয় নিয়ম অনুসারে মদ বোকা/নির্বোধদের (fool) জন্য নিষিদ্ধ। কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক আইন অনুসারে বুদ্ধিমানদের জন্য মদ হালাল। তিনি মদ, নর্তকীসহ বেশ কিছু পাপ কাজে জড়িত ছিলেন। তিনি নিজেই বলেছেন: كنت أرجع بالليلي إلى داري فمهما غلبني النوم عدلت إلى شرب قدح من الشراب ريثما تعود إلى قوتي
অর্থাৎ, আমি রাতে বাড়িতে ফিরে আসতাম।যখন আমাকে ঘুম পর্যুদস্ত করত তখন আমি মদ পান করতাম।শক্তি ফিরে না আসা পর্যন্ত তা পান করতাম।[লিসানুল মীযান ২/২৯২]

তার সম্পর্কে আরো এসেছে:
أنه لما صار وزيراً لبعض السلاطين كانوا يشتغلون عليه فإذا فرغوا حضر المغنون وهيء مجلس الشراب
তিনি কিছু বাদশাহর মন্ত্রী হন।তারা তাকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখতেন। কাজ থেকে অব্যাহতি পেলে নর্তকীর আয়োজন হত ও মদের ব্যবস্থা করা হত।
(সীয়ারু [আ'লামিন নুবালা ১৭/৫৩৩]

নোটঃ ইবনে সিনার উপরিউক্ত আক্বিদা (বিশ্বাসের) চরম বিরোধীতা করে তাকে জিন্দিক,কাফির ফতওয়া দিয়েছেন ততকালীন সময়ের কিংবদন্তী উলামায়ে কেরাম! তার প্রতি আলেমদের এই বিরোধীতার মূলে রয়েছে মেটা ফিজিক্সে ইবনে সিনার নিজস্ব দর্শন।
তার বিরুদ্ধে কাফের ফতোয়া দেয়া হয় নিম্নোক্ত তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করেঃ

প্রথমত:
ইবনে সিনা তার দর্শনে বিশ্বকে চিরজীবী দাবী করেন যার কোন শুরু নেই। যেখানে মুসলিমরা বিশ্বাস করেন আল্লাহ শূন্য থেকে এই পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন।

দ্বিতীয়ত:
তিনি বলেন, আল্লাহ সৃষ্টি এবং ধ্বংস সম্পর্কে সাধারন ভাবে জানেন, কিন্তু পুংখানুপুঙ্খ ভাবে নয়। যেখানে মুসলিমরা বিশ্বাস করে থাকেন, আল্লাহ আক্ষরিক অর্থেই প্রতিটি বিষয় অবগত।

তৃতীয়ত,
তিনি শারীরীক পুনরুথ্থান নয়, বরং আত্মিক পুনরুথ্থানের উপর জোর দেন। যেখানে মুসলিমরা বিশ্বাস করে আল্লাহতাআলা শারীরীক পুনরুথ্থান ঘটাবেন!

মূলত এই তিনটি কারনে ইমাম গাজালী রাহিমাহুল্লাহও ইবনে সিনাকে কাফের সাব্যস্ত করা বাধ্যতামূলক বলে মনে করেন!
.

একজন যুক্তিবাদী মানুষ হিসাবে মক্কা-মদীনা বনাম এথেন্স-আলেকজান্দ্রিয়ার মধ্যে তিনি এথেন্স আলেকজান্দ্রিয়াকে বেছে নিয়েছিলেন। তার পূর্বসূরী আল কিন্দী এবং উত্তরসূরী ইবন রুশদের মত তাকেও সর্বসম্মতিক্রমে "কাফের" ঘোষণা করা হয়েছিলো। সর্বশেষ উলামাদের পরামর্শের ভিত্তিতে আব্বাসীয় খলিফা আল মুস্তানজিদ (মৃত্যু ১১৭০ খৃঃ) তার সব বই পুড়িয়ে ফেলার আদেশ দিয়েছিলেন। নাস্থিকতা, ইসমাইলী ধর্মতাত্মিক এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ ধারণ করা এবং প্রচার করায় তিনি বারবার পাড়ি জমান এক দেশ থেকে আরেক দেশে।

❒ ফুটনোটঃ
১) Islam a way of life By Phillip K. Hitti
২) Internet Encyclopidia of philosophy (A peer reviwed academic source): Avicenna
৩) The philosophy book by Dorling Kindersley

❒ ইবনে সিনার ব্যাপারে উলামাদের ফাতওয়াঃ

 শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ ইবনে সিনা সম্পর্কে বলেন,

وابن سينا تكلم في أشياء من الإلهيات والنبوات والمعاد والشرائع لم يتكلم فيها سلفه ولا وصلت إليها عقولهم ولا بلغتها علومهم فإنه استفادها من المسلمين وإن كان إنما أخذ عن الملاحدة المنتسبين إلى المسلمين كالإسماعيلية وكان هو وأهل بيته وأتباعهم معروفين عند المسلمين بالإلحاد وأحسن ما يظهرون دين الرفض وهم في الباطن يبطنون الكفر المحض
ইবনে সীনা ইলাহ,নবুওয়াত, পরকাল ও শরী'আত সম্পর্কে এমন সব কথাবার্তা বলেছেন যা তার পূর্বের কোনো সালাফ বলেননি। তাঁদের বিবেক ও জ্ঞান সেদিকে যেতেই পারেনি। তিনি এসব শিখেন ইসমাইলিয়্যাহদের মত নামধারী নাস্তিকদের থেকে।তিনি,তার পরিবার ও তার অনুসারীরা মুসলিমদের নিকট নাস্তিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।তারা বাহিরে রাফেজীর ভাব নিতেন আর ভিতরে কুফরী লালন করতেন।

তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন
أن ابن سينا أخبر عن نفسه أن أهل بيته وأباه وأخاه كانوا من هؤلاء الملاحدة وأنه إنما اشتغل بالفلسفة بسبب ذلك
ইবনে সীনা নিজেই তার সম্পর্কে বলেছেন, তার পরিবার, তার পিতা ও তার ভাইয়েরা এসব নাস্তিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। সে একারণে দর্শন শাস্ত্রে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
[মাজমুঊল ফাতওয়া ৯/২৩২-২৩৫]

অন্যত্র আরো বলেন,

وابن سينا أحدث فلسفة ركبها من كلام سلفه اليونان ومما أخذه من أهل الكلام المبتدعين الجهمية ونحوهم وسلك طريق الملاحدة الإسماعيلية في كثير من أمورهم العلمية والعملية ومزجه بشيء من كلام الصوفية وحقيقته تعود إلى كلام إخوانه الإسماعيلية القرامطة الباطنية فإن أهل بيته كانوا من الإسماعيلية أتباع الحاكم الذي كان بمصر وكانوا في زمنه ودينهم دين أصحاب "رسائل إخوان الصفا" وأمثالهم من أئمة منافقي الأمم الذين ليسوا مسلمين ولا يهود ولا نصارى
ইবনে সীনা জাহমিয়াদের মত বিদ'আতপন্থী আহলে কালামদের থেকে কিছু গ্রহণ করে ও তার পূর্ববর্তী ইউনানিদের থেকে কিছু নিয়ে সবকে জোড়া দিয়ে এক নতুন দর্শন আবিষ্কার করেন।তিনি ইলমী, আমলী অনেক ক্ষেত্রে নাস্তিক ইসমাইলিয়্যাহদের তরীকায় চলেন।তার সাথে আরো মিশ্রণ করেন সূফীদের কথাবার্তা। তিনি বাস্তবিকভাবে তার ইসমাইলিয়্যাহ কারামুতাহ বাতেনিয়্যাহ ভাইদের মতাদর্শে ছিলেন। তার পরিবার ছিলেন মিসরে অবস্থানকারী হাকেমের অনুসারী ইসমাইলিয়্যাহদের অন্তর্ভুক্ত। তারা তার যুগে ছিলেন। "রাসায়েল ইখওয়ানুস সফা"-র অনুসারী ও তাদের মত মুসলিম নয়, ইহুদী নয়, খ্রিষ্টান নয় বরং মুনাফিকদের ধর্ম ছিল তাদের ধর্ম।

[মাজমুঊল ফাতওয়াঃ ১১/৫৭১]

 শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ, ইবনে সিনা সম্পর্কে বলেন,

وكان ابن سينا كما أخبر عن نفسه قال: أنا وأبي من أهل دعوة الحاكم فكان من القرامطة الباطنية الذين لا يؤمنون بمبدأ ولا معاد ولا رب ولا رسول مبعوث جاء من عند الله تعالى
ইবনে সীনা তেমনটি ছিলেন যেমনটি তিনি তার সম্পর্কে বলেছেন: আমি ও আমার পিতা হাকেমের আন্দোলনের অনুসারী ছিলাম।তিনি কারামুতাহ বাতেনিয়্যাহর অন্তর্গত ছিলেন, যারা বিশ্বাস করেনা (সৃষ্টির) সূচনা, পরকাল, রব,প্রেরিত রাসূল আল্লাহর পক্ষ থেকে যা নিয়ে এসেছেন তা।(ইগাসাতুল লাহফান ২/১৯৫)
তিনি তাকে নাস্তিকদের নেতা বলে আখ্যায়িত করেছেন।(ইগাসাতুল লাহফান ২/১৯৬)

 জারাহ ওয়া ত্বাদিলের ইমাম শামসুদ্দিন আয যাহাবি রাহিমাহুল্লাহ বলেন -
وله كتاب الشفاء وغيره وأشياء لاتحتمل ,وقد كفره الغزالي في كتاب (( المنقذ من الضلال )) وكفر الفارابي )

তার "আশ-শিফা" সহ অন্যান্য কিতাব এবং এমন কিছু বিষয় রয়েছ যা সহ্য করার মত না।তাকে গাযালী "আল-মুনকিয মিলাজ জলাল" কিতাবে কাফের বলেছেন এবং ফারাবীকেও কাফের বলেছেন।
[সীয়ারু আ'লামিন নুবালা ১৭/৫৩৫]

 ইমাম ইবনু ইমাদ রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
أكثر العلماء على كفره وزندقته حتى قال الإمام الغزالي في كتابه "المنقذ من الضلال" : لا شك في كفرهما أي الفارابي وابن سينا
অধিকাংশ উলামা তাকে কাফের ও নাস্তিক বলেছেন। এমনকি ইমাম গাযালী তার কিতাব 'আল-মুনকিয মিনাজ জলাল' কিতাবে বলেছেন, উভয়ের অর্থাৎ ফারাবী ও ইবনে সীনার কুফরীর ব্যাপারে সন্দেহ নেই।[ সাযারাতুয যাহাব ২/৩৫৩]

 ইমাম ইবনুস সালাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন -
كان شيطاناً من شياطين الإنس
সে (ইবনে সিনা) ছিল মানুষদের মধ্যে একজন শয়তান!
[ফাতাওয়ায়ে ইবনুস সালাহ - ১/২০৯]

 ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী রাহিমাহুল্লাহ,
ইবনে সিনাকে রদ্দ করে যাহাবীর উদ্ধৃতি দিয়ে অভিশাপ দিয়েছেন, যেন আল্লাহ তার প্রতি রাজী না থাকেন, তার রচিত “লিসানুল মীযান” কিতাবে।
لا رضـي اللـه عنه

 আনওয়ার শাহ আল কাশ্মিরী (রহ) তাকে মুরতাদ যিন্দিক, শিরকের দিকে আহবান কারী বলেছেন।
ابن سينا الملحد الزنديق القرمطي غدا مدى شرك الردى وشريطة الشيطان
[রেফারেন্স - ফয়যুল বারী ১/১৬৬]

 ইবনে কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

قد حصر الغزالي كلامه في "مقاصد الفلاسفة" ثم رد عليه في "تهافت الفلاسفة" في عشرين مجلساً له، كفره في ثلاث منها، هي: قوله بقدم العالم وعدم المعاد الجسماني وأن الله لا يعلم الجزئيات وبدَّعه في البواقي ويقال أنه تاب عند الموت والله أعلم

গাযালী তার মতবাদকে “মাকাসিদুল ফালাসাফাহ” গ্রন্থে একত্রিত করেছেন। তারপর তিনি ২০টি আলোচনায় “তাহাফুতুল ফালাসাফাহ”-তে তার জবাব দিয়েছেন। তিন কারণে তিনি তাকে কাফের বলেছেন। তা হল: তার মতে বিশ্বজগত সৃষ্টি নয়, শারীরিকভাবে পরকাল হবে না এবং আল্লাহ শাখাগত বিষয় সমূহ জানেন না। আর অন্যান্য কারণে তিনি তাকে বিদ’আতী বলেছেন। বলা হয়ে থাকে (অনিশ্চিত) , তিনি নাকি মরার সময় তাওবাহ করেছিলেন। আল্লাহ ভালো জানেন। [আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ১২/৪৩]

 উস্তাযুল আলেম আল্লামাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহ, ফারাবী এবং ইবনু সীনাকে কঠোরভাবে রদ্দ করেছেন এবং তাদের নামে মুসলিমদের নাম না রাখার পরামর্শ দিয়েছেন!
[ফাওয়ায়েদুল জালিয়্যাহ, যাহরানী পৃষ্ঠা ৩৭]

আমাদের সবার জন্য প্রকৃত ইতিহাস থেকে সঠিক তথ্য খোঁজা এবং অন্ধভাবে কারো ভক্ত হওয়া থেকে বেছে থাকা উচিত। ব্যক্তি যত বড়ই হোক, কুফর শিরক এবং বিদাত ও পথভ্রষ্টতার সাথে সম্পর্কযুক্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে তখন তাকে সম্পূর্ণরুপে বর্জন করাটা আবশ্যক।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদেরকে যাবতীয় ফিতনা থেকে হিফাযত করুণ এবং হক (সত্য)কে হক হিসেবে মেনে নেওয়ার তাওফি্ক্ব দান করুণ।
আ-মীন।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
► আপনার যদি পোস্টটি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করুন ও পরবর্তী আপডেট পেতে পেজটি লাইক দিয়ে রাখুন। কেননা রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি মানুষকে হিদায়াতের দিকে ডাকে তার জন্য ঠিক ঐ পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে, যে পরিমাণ পাবে তাকে অনুসরণকারীরা।” [সহীহ মুসলিম/২৬৭৪,৬৮০৪]

► ইছলাহ্ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
► https://www.facebook.com/ichlah/

Post a Comment

0 Comments