সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাতের শরঈ বিধান(হানাফিদের একান্ত ভাবা উচিত)ঃ--
প্রশ্নঃ
সালাতে/ছলাতে/নামাজের পর সম্মিলিত ভাবে হাত তুলে দুয়া বা মুনাজাত করা যাবে কিনা?
উত্তরঃ
এ বিষয় নিয়ে ঝগড়া করার মোটেই কোন প্রশ্নই উঠেনা, তবুও কিছু মূলনিতী ও প্রাসঙ্গিক বিষয় জেনে রাখা ভাল।
(দয়া করে পুরো পোস্ট ছবরের সাথে পড়েন) তারপর কি ভাব্বেন সেটা আপনার ব্যাপার_
✏ ✏
দোয়া করতে বলা হয়েছে, -- সকল ফরজ নামাজের পর, মুনাজাত, সেটা - (সম্মেলিত না একা কি)?
"দোয়া হচ্ছে এবাদতের মুল মগজ" মাথা থেকে পা পর্যন্ত হচ্ছে দোয়া , দোয়া ছাড়া বাচা অসম্ভব , আপনি ইবাদত করছে কিন্তু আল্লাহর কাছে চাইছেন না কেমন।।
১।পুরোটা ছলাতই হচ্ছে দুয়া। কেননা ছলাতের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে 'দুয়া'।আর পুরো ছলাতে তাকবীরে তাহরীমা থেকে শুরু করে একদম সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত আমরা নামাজে বিভিন্ন দুয়া করে থাকি।আর মুনাজাত শব্দের অর্থ হচ্ছে একান্ত আলাপ চারিতা করা। অর্থাৎ বান্দা তার রবের সাথে একান্ত আলাপ-আলোচনা করবে এটার নামই ইসলামী পরিভাষায় মুনাজাত।
*
সহীহ বুখারীর হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি-''বান্দা যখন ছলাতে দাঁড়ায় তখন সে তাঁর রবের সাথে মুনাজাত(আলাপ-আলাপন) করে।সুতরাং নামাজই হচ্ছে দুয়া ও নামাজই হচ্ছে মুনাজাত।
*
২।ছলাতের সালাম ফিরিয়ে যে মুনাজাত করা হয় তা নামাজের অংশ নয়,এর সাথে নামাজ পূর্ণ বা অপূর্ণ হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু নামাজের শেষে হাত তুলে দুয়া বা মুনাজাত করার ২ টি ধরন হতে পারে।
*
ক)একা একা হাত তুলে নামাজের পরে দুয়া করা রাছুলুল্লাহ(ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম)'র সহীহ সুন্নাহ থেকে প্রমানিত। সুতরাং নামাজের পরে একা একা হাত তুলে দুয়া করাকে বিদআত বলা যাবেনা।অনেকে তো সম্মিলিত ভাবে মুনাজাত বিদ'আত বলতে গিয়ে এই সুন্নাহ টুকুও আদায় করেনা,আফসোস! নিচে এর দলিল দেওয়া হবে।
*
খ)সম্মিলিত ভাবে দুয়া করা।- এভাবে দুয়া করা রাছূলুল্লাহ(ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম)'র সুন্নাহ থেকে বাএকজন সাহাবা ব্যতিত অন্য কোন সাহাবার সুন্নাহ থেকে প্রমানিত নয়,কিন্তু এ আমলটি যদি ছলাতের অংশ মনে করে না করা হয় এবং এটি নিয়ে বারাবাড়ি করা না হয় একে ৪ মাজহাবের ফুকাহাগন বৈধ ও মুস্তাহাব বলেছেন কেননা সহীহ হাদিস থেকে পাওয়া যায়-'' প্রতি ফরজ নামাজের পরে দুয়া কবুল হয়,সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করলে দুয়া কবুল হয়, হাত তুলে মুনাজাত করলে দুয়া কবুল হয়।'' এগুলোর দলিল ও সূত্র নিচে ইংশাআল্লাহ আলোচনা করা হবে।
*
উল্লেখ্য যে কেউ যদি ২ এর'খ' সুরতে মুনাজাত করাকে জরুরী মনে করে কিংবা বাড়াবাড়ি করে অথবা সুন্নাহ মনে করে তাহলে তা বিদ'আত বলে বিবেচিত হবে।(আল্লাহ আমাদের হিফাজাত করুক)
*
✏ ✏
**২ এর ''ক'' দলীল/সূত্রঃ**
*
عَنْ الْفَضْلِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلاةُ مَثْنَى مَثْنَى تَشَهَّدُ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ وَتَخَشَّعُ وَتَضَرَّعُ وَتَمَسْكَنُ وَتَذَرَّعُ وَتُقْنِعُ يَدَيْكَ يَقُولُ تَرْفَعُهُمَا اِلَى رَبِّكَ مُسْتَقْبِلًا بِبُطُونِهِمَا وَجْهَكَ وَتَقُولُ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَهُوَ كَذَا وَكَذَا،
১। রাসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম) বলেন, রাতের সালাত দুই রাকাত দুই রাকাত করে, প্রত্যেক দুই রাকাতে তাশাহুদ পড়বে, বিনীত হবে, অসহায়ত্ত প্রকাশ করবে এবং তোমার দুই হাত প্রভুর দিকে উঠিয়ে বলবে, হে আল্লাহ, আমাকে মাফ করে দাও। যে ব্যক্তি এরূপ করবে না, তার সালাত অসম্পূর্ণ।
*
[সুনানু আবি দাউদ : আল মাকতাবাতুল আশরাফিয়া, দেওবন্দ, খ. ১, পৃ. ১৮৩, আবু দাউদ শামেলা হাদিস : ১২৯৮, কিতাবুস সালাত, বাবু সালাতিন নাহার, পৃ. ৪০/২;সুনানে তিরমিযী,বাবু মা-জা-আ ফিত তাখাশশু' হাঃ৩৫১; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩২৫, পৃ. ৪১৯/১, কিতাবু ইকামাতিস সালাত;সহীহ ইবনু খুজায়মা , হাঃ১২১২ -কেউ কেউ হাদিসটির সনদগত মান কে দুর্বল আবার কেউ কেউ সহীহ বলেছেন]
*
২।
مُحَمَّدُ بن اَبِي يَحْيَى، قَالَ: رَأْيَتُ عَبْدَ اللَّهِ بن الزُّبَيْرِ، وَرَاَى رَجُلًا رَافِعًا يَدَيْهِ يَدْعُو قَبْلَ اَنْ يَفْرَغَ مِنْ صَلاتِهِ، فَلَمَّا فَرَغَ مِنْهَا، قَالَ:" اِنََ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَكُنْ يَرْفَعُ يَدَيْهِ، حَتَّى يَفْرَغَ مِنْ صَلاتِهِ"
হযরত মুহাম্মাদ ইবনে আবু ইয়াহইয়া (রহ.) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা.) দেখলাম যে তিনি একজন নামাজীকে দেখলেন, সে নামাজ শেষ করার আগেই হাত তুলে দোয়া করছেন। তখন তিনি তাকে বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজ শেষ হওয়ার আগে হাত তুলে দোয়া করতেন না।
*
[মাজমাউয যাওয়াইদ-১০/১৬৯,মাজমাউজ যাওয়াইদ, দারুল ফিকর, বৈরুত, লেবানন, খ. ১০, পৃ. ২৬৬, হাদিস : ১৭৩৪৫; মুজামুল কাবির লিত তবারানি, পৃ. ২২, খ. ১১; হাফেজ হাইছামি বলেন, ইমাম তাবরানি হাদিসটি বর্ণনা করেছেন এবং এ হাদিসের রাবিরা নির্ভরযোগ্য। ]
*
৩।
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার নবী (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম) নামাজ শেষে সালামের পর হাত উঠিয়ে কেবলামুখী হয়ে বললেন, হে আল্লাহ ওলিদ ইবনে ওলিদ, আইয়াশ ইবনে আবু রাবিয়া, সালামা ইবনে হিশামসহ যেসব দুর্বল মুসলিম কোনোরূপ উপায় উদ্ভাবন করতে পারে না, কোনো পথ পায় না, তাদের কাফেরের হাত থেকে মুক্তি দাও।
*
[তাফসিরে ইবনে কাসির খ. ১ পৃ. ১২৩-হাদিসটি গ্রহণযোগ্য।]
*
এ হাদিস থেকে প্রমান হল রাছূলুল্লাহ(ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম) ছালাতের পর হাত তুলে একা একা দুয়া করতেন।
*
৪।
عَنْ جَابِرٍ بْنِ يَزِيْدٍ الاَسْوَدِ الْعَامِرِيِّ عَنْ اَبِيْه قَالَ : صَلَّيْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْفَجْرَ فَلَمَّا سَلَّمَ اِنْحَرَفَ وَ رَفَعَ يَدَيْهِ وَدَعَا
হযরত জাবের ইবনে ইয়াযিদ আল আসওয়াদাল আমেরী (রা) তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আমি রসূলুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছল্লাম)-এর সাথে ফজরের নামাজ পড়লাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাম ফিরিয়ে ঘুরে বসলেন এবং দুই হাত তুলে দোয়া করলেন।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা-১/৩৩৭)
* ✏ ✏
এভাবে ছলাতের পরে হাত তুলে মুনাজাতের ব্যাপারে মান্যবর আলেমদের মতামত নিচে দেওয়া হল-
>>(আহলে হাদিস আলেমদের ফতোয়াঃ)
*
১. হাফেজ আব্দুল্লাহ রোপড়ী সাহেব বলেন, ‘ফরজ নামাজের পর হাত তুলে মুনাজাত করার যে প্রচলন রয়েছে তা সঠিক।’
(ফাতাওয়ায়ে আহলে হাদীস-২/১৯০)
*
২। মিয়া নজীর হুসাইন দেহলভী সাহেব বলেন, ‘ চিন্তাশীল ব্যক্তিমাত্রই জানেন যে, ফরজ নামাজের পর হাত তুলে মুনাজাত করা জায়েয ও মুস্তাহাব। যায়েদ (যিনি এই মুনাজাতকে বিদআত বলেন সে) ভুল বলেন।’
(ফাতাওয়ায়ে নাজীরিয়াহ-১/৫৬৬)
*
৩। মাওলানা ছানাউল্লাহ আমৃতসরী বলেন, ‘কোন কোন রেওয়ায়েতে নামাযের পর হাত তুলে মুনাজাত করার কথা রয়েছে।’
(ফাতাওয়ায়ে ছানাইয়্যাহ-১/৫২৭)
*
>>(দেওবন্দী আলেমদের ফতোয়াঃ)
*✏ ✏
১।দেওবন্দী দের অন্যতম বৃহৎ ফতোয়ার কিতাবে স্পষ্ট উল্লেখ করা আছে--
نماز پنجگانه كے بعد هاتھ اطھا کر دعا منگنا سنت نبويه صلي الله عليه و سلم هے- حصن حصين جومعتبر كتاب حديث كي هے اس مين احاديث مرفوعه دعا ميم هاطھ اطھانے اور بعد دعا كے منه پر هاتھ پھرنے کی موجد هيی انكو ديكھ ليا جاوے
অর্থ : পাঁচ ওয়াক্ত নামায এর পর হাত উঠিয়ে দোয়া করা সুন্নতে নববী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অন্তর্ভুক্ত। হাদীস শরীফ এর নির্ভরযোগ্য কিতাব হিছনে হাছীন এর মধ্যে দোয়াতে হাত উঠানো এবং দোয়া শেষে মুখ মাছেহ করা প্রসঙ্গে বহু মরফু হাদীস বর্ণিত আছে। এটা দেখে নেয়া যেতে পারে।নামায এর পর দোয়া করা সুন্নত হওয়াও তাতে উল্লেখ আছে | "
[ ফতোয়ায়ে দেওবন্দ ২য় খন্ড ১৯৯ পৃষ্ঠা]
*.
২।দেওবন্দী দের উক্ত ফতোয়ার কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে--
سوال- فرضوی کے بعد دعاء مامگنا جاءز هيی؟
جواب- دعاء منگنا تمام فرضوی کے بعد جاءز و مستحب هے
অর্থ: সুওয়াল- ফরজ নামাজের পর মুনাজাত করা জায়িয আছে কি ?
জাওয়াব- সকল ফরজ নামাজের পর মুনাজাত করা জায়িয ও মুস্তাহাব।"
[ফতোয়ায়ে দেওবন্দ ২য় খন্ড ২১০ পৃষ্ঠা।]
*
৩।একা একা হাত তুলে মুনাজাতের বিস্তারিত দলিল আলোচনা করে লিখা হয়েছে-
فتحصل من هذا كله ان الدعاء دبر الصلوة مسنون ومشروع في المذاهب الاربعة لم ينكره الاناهق مجنون قد ضل في سبيل هواه و وسوس له الشيطان واغواه
অর্থ: উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা এটাই সাবস্ত্য হয় যে, চার মাযহাবের প্রত্যেকের মত অনুসারে নামাজের পর মুনাজাত করা অবশ্যই সুন্নত ও শরীয়তসম্মত। যে ব্যক্তি এটা অস্বীকার করবে, সে নিশ্চিত পাগল ও নফসের তাড়নায় পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং সে শয়তানী ওয়াসওয়াসায় ও ধোঁকায় পড়েছে।"
[ইস্তেহবাবুদ দাওয়াত আক্বিবুছ ছালাওয়াত ৩য় খন্ড ৮০২ পৃষ্ঠা]
*
৪।শায়খ আশরাফ আলী থানবী(রহিমাহুল্লাহ) তার ফতোয়ার কিতাবে ফতোয়া দিয়েছে--
سوال- بعد نماز سنت و نفل بهی دعا هاتھ اطھا کر ماگنا چاھنے يا صرف بعد فرض هی دعا ضروري هے؟
چواب- فرض نمازون كے بعد دعا مگنا اكد هے كيوونكه حديثون مين اسكي ترتيب ز ياده هے. باقي سنت و نوافل كے بعد دعا منگنا ضروري نهين اگر مانگ ليا كر ے اچها هے
অর্থ: সুওয়াল- সুন্নত ও নফল নামাজের পরও কি হাত উঠিয়ে মুনাজাত করতে হবে, না শুধু ফরজ নামাজের পর মুনাজাত করাই জরুরী?
*
জাওয়াব- ফরজ নামাজ সমূহের পর মুনাজাত করাই অধিক তাকীদপূর্ন। কেননা ফরজ নামাজের পর মুনাজাত করার জন্যই হাদীস শরীফে বেশী উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। সুন্নত ও নফলের পর মুনাজাত করা অত্যাবশ্যকীয় নয়, যদি মুনাজাত করে, তবে উত্তম হবে।"
[ইমদাদুল আহকাম ১ম খন্ড ২২৬ পৃষ্ঠা]
*
৫।আল্লামা রশীদ আহমাদ(রহিমাহুল্লাহ) বলেন-
فراءض کے بعد دعا حضور صلي الله عليه و سام سے ثابت هے - اور فقه ميی اسکا جوازمصرح - فقط فرق يه هے كه جن فراءض كے بعد سنتيی هيی انکے بعد دعاے طويل نه چا ہے
অর্থ: ফরজ নামাজের পর মুনাজাত করা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে প্রমানিত। তবে পার্থক্য এতটুকু যে, যে সকল ফরজ নামাজের পর সুন্নত নামাজ রয়েছে, উহার পর মুনাজাত দীর্ঘ করা যাবে না।"
[আহসানুল ফতওয়া ১ম খন্ড ৩৪৬ পৃষ্ঠা।]
*
.৬।মুফতী মাহমূদ গাংগূহী(রহঃ)বলেন-
فرض نمازوی کے بعد دعا مقبول هوتی هے اس وقت دعا كرنا حديث و فقه سے ثابت هے
অর্থ: ফরজ নামাজের পর দোয়া কবুল হয়, ফরজ নামাজের পর দোয়া করা হাদীস শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাব দ্বারা প্রমানিত রয়েছে।"
[ফতোয়ায়ে মাহমূদীয়া ২য় খন্ড ৫০ পৃষ্ঠা ।]
*
এ সকল ফতোয়া দিয়ে বিশেষ এক দল ফরজ ছলাতের পরে উলামায়ে দেওবন্দ সম্মিলিত দুয়া করাকে সুন্নত বলে থাকে এটি প্রমান করতে চান আসলে বিষয়টি হচ্ছে তারা উক্ত হাদিস গুলো থেকে নামাজের পর একা একা হাত তুলে দুয়া করাকে সুন্নত বলেছেন সম্মিলিত ভাবে নয়, কেননা উল্লেখিত আলেমগন থেকে এটিও প্রমানিত তারা সম্মিলিত দুয়া করা রছূলের সুন্নাহ থেকে প্রমানিত নয় বলে মত পোষণ করেছে নিচে তার দলিল দেওয়া হবে।
*
✏ ✏
**২ নং এর ''খ'' দলিল/সূত্রঃ**
*
যারা ফরজ ছলাতের পরে হাত তুলে সকল কে নিয়ে দুয়া করেন তারা যদি এটিকে নামাজের অংশ মনে না করে বা সুন্নাহ মনে না করে করেন তাহলে এটি জায়েয যখন তারা এই নিয়তে দুয়া করবে হাত তুলে দুয়া করলে আল্লাহ্ দুয়া কবুল করেন,প্রতি ফরজ নামাজের পরে দুয়া কবুল হয় তাই, এবং কোন গোত্রের লোকেরা সম্মিলত ভাবে দুয়া করলে আল্লাহ্ কবুল করবেন তাই দুয়া করছি ছলাতের অংশ মনে করে নয়।
*
১।আবু উমামা আল বাহেলি (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহকে (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম) জিজ্ঞেস করা হলো, কোন মুহূর্তের দোয়া অধিক কবুল হয়ে থাকে? রাসূল (সা.) বললেন, রাতের শেষাংশের দোয়া এবং ফরজ নামাজগুলোর পরের দোয়া।
*
[জামে তিরমিজি, কিতাবুদ দাওয়াত, বাব. ৮, হাদিস : ৩৪৯৯, খ. ৫, পৃ. ১৮৮; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা, হাদিস : ৯৯৩৬]
২।
ইমাম তবারি (রহ.) হজরত ইমাম জাফর সাদিকের (রহ.) প্রতিবেদন সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, ফরজ নামাজের পর দোয়া প্রার্থনা করাটা নফল নামাজের পর দোয়া করার চেয়ে ওইরূপ উত্তম, যেরূপ নফল নামাজের চেয়ে ফরজ নামাজ উত্তম। এ বর্ণনাটি হাফেজ ইবনে হাজার তার ফতহুল বারির খ- ১১, পৃ. ১৪৫-এর মধ্যে এনেছেন। এ বর্ণনাটি হাসান স্তরের।
৩।
عَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيِّ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِنَّ اللَّهَ حَيِيٌّ كَرِيمٌ يَسْتَحْيِي اِذَا رَفَعَ الرَّجُلُ اِلَيْهِ يَدَيْهِ اَنْ يَرُدَّهُمَا صِفْرًا خَائِبَتَيْنِ
হযরত সালমান ফারসী রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বড় দয়ালু দাতা। যখন বান্দা তাঁর কাছে দোয়ায় হাত উঠায় তখন তিনি তা খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।
[তিরমিযী শরীফ, ২/১৯৫, হাদীস নং-৩৪৭৯-হাদিসটি ইমাম তিরমিজি হাসান এবং শায়খ আলবানি সহিহ বলেছেন]
৪।
সাহাবি হজরত মালেক ইবনে ইয়াসার থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, যখন তোমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে, তখন তোমাদের হাতের তালু দিয়ে প্রার্থনা করবে, হাতের পিঠ দিয়ে নয়।
*
[সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৮৮, কিতাবুস সালাত, বাবুদ দোয়া, নাসিরুদ্দীন আলবানি বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ।]
৫।
عَنْ ثَوْبَانَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لا يَحِلُّ لِامْرِئٍ اَنْ يَنْظُرَ فِي جَوْفِ بَيْتِ امْرِئٍ حَتَّى يَسْتَأْذِنَ فَ اِنْ نَظَرَ فَقَدْ دَخَلَ وَلَا يَؤُمَّ قَوْمًا فَيَخُصَّ نَفْسَهُ بِدَعْوَةٍ دُونَهُمْ فَ اِنْ فَعَلَ فَقَدْ خَانَهُمْ
হযরত সাওবান (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যক্তির জন্য উচিত নয় অন্য কারোর ঘরের ভিতরে তাকানো তাদের থেকে অনুমতি নেওয়ার আগে। যদি সে (অনুমতি নেওয়া আগে) তাকায় তাহলে সে খেয়ানত করলো। কোন ব্যক্তি লোকদের ইমাম হয়ে এমন হবে না যে, সে তাদেরকে বাদ দিয়ে দোয়াতে শুধু নিজের জন্যই দোয়া করবে। যদি এরুপ করে, তাহলে সে তাদের সাথে খেয়ানত করল।’
[তিরমিযী শরীফ ১:৮২, হাদীস নং-৩২৫]
৬।
কিছু মানুষ একত্রিত হয়ে দোয়া করা প্রসঙ্গে-
عَنْ سَلْمَانَ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:"مَا رَفَعَ قَوْمٌ اَكُفَّهُمْ اِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ يَسْاَلُونَهُ شَيْئًا، اِلا كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ اَنْ يَضَعَ فِي اَيْدِيهِمُ الَّذِي
হযরত সালমান (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন কিছু লোক হাত তুলে আল্লাহ তাআলার কাছে চায় তখন আল্লাহ তাআলার কাছে (তাদের) হক হয়ে যায় যে, আল্লাহ তাআলা তাদের হাতে তাদের চাওয়ার জিনিস দান করেন।''
[মুজামুল কাবীর লিত ত্ববরানী-৬০১৯]
৭।
একজন সাহাবীর থেকে প্রমানিত যিনি ফজরের নামাজের পরে সকল কে নিয়ে সম্মিলিত মুনাজাত করেছিলেন।তবে সেটি বিশেষ প্রেক্ষাপটের কারণে ছলাতের অংশ মনে করে নয়। -
*
''হযরত আলা ইবনুল হাযরমী রা.এর একটি ঘটনা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন,ফজর উদিত হওয়ার পর ফজরের আযান দেয়া হল।তখন আলা ইবনুল হাযরমী রা. লোকদের নিয়ে ফজরের নামায আদায় করলেন।অতঃপর যখন নামায শেষ করলেন।তখন তিনি হাঁটু গেড়ে বসলেন এবং লোকজনও অনূরুপভাবে বসল।এরপর তিনি দুই হাত উঠিয়ে দুআ শুরু করলেন।আর লোকজনও তাঁর মত করল।''
*
[আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ফি জিকরি রদ্দাতি আহলিল বাহরাইন ওয়া আওদিহিম ইলাল ইসলাম। খ. ৬, পৃ. ৩৪৭, দারুত তাকওয়া, কায়রো, মিসর; তারিখে তাবারি, জিকরু খবরি আহলিল বাহরাইন, খ. ২, পৃ. ২৮৮]
*
✏ ✏
তবে উচিত হচ্ছে মাঝে মাঝে এ কাজ থেকে ইমামদের বিরত থাকা যাতে মুসল্লিরা বুঝেন একাই সুন্নাহ সম্মিলিত ভাবে নয়।
এবং উপরে উল্লেখিত শর্তের আলোকে যদি ছলাতের পরে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা না হয় তাহলে বিদ'আত বলে বিবেচিত হবে।
১।
আল্লামা আব্দুল হাই লাক্ষনৌভী (রহঃ) বলেন , বর্তমান সমাজে প্রচলিত প্রথা যে , ইমাম সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু’আ করেন এবং মুক্তাদীগণ আ-মীন , আ-মীন বলেন , এ প্রথা রাসূল (সাঃ) এর যুগে ছিল না ।
(ফতওয়া আব্দুল হাই , ১ম খন্ড , পৃঃ ১০০)
২।
আল্লামা ইউসুফ বিন নূরী(রহঃ) বলেন , অনেক স্থানেই এ প্রথা চালু হয়ে গেছে যে ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা হয় যা রাসূল সাঃ হতে প্রমাণিত নয় ।
(মা’আরেফুস সুনান , ৩য় খন্ড , পৃঃ ৪০৭)
৩।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন , ইমাম পশ্চিমমুখী হয়ে অথবা মুক্তাদী গণের দিকে ফিরে মুক্তাদী গণকে নিয়ে মুনাজাত করা কখনও রাসূল (সাঃ) এর তরীকা নয় । এ সম্পর্কে একটিও সহীহ অথবা হাসান হাদীস নেই ।
( ইবনুল কাইয়্যেম , যাদুল মা’আদ , ১ম খন্ড ,পৃঃ নং ১৪৯ ‘ফরয সালাতের পর দু’আ করা সম্পর্কে লেখকের মতামত’ অনুচ্ছেদ )
৪।
আল্লামা মাজদুদ্দীন ফিরোযাবাদী (রহঃ) বলেন , ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর ইমামগণ যে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেন , তা কখনও রাসূল (সাঃ) করেননি । এবং এ সম্পর্কে কোন হাদীসও পাওয়া যায় না ।
(ছিফরুস সা’আদাত , পৃঃ২০)
৫।
আল্লামা শাত্বেবী (রহঃ) বলেন , শেষ কথা হল এই যে , ফরয সালাতের পর সম্মিলিতভাবে রাসূল (সাঃ) নিজেও মুনাজাত করেননি , করার আদেশও দেননি । এমনকি তিনি এটা সমর্থন করেছেন , এ ধরনের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না ।
(আল-ইতেসাম ,১ম খন্ড , পৃঃ ৩৫২)
৬।
আল্লামা ইবনুল হাজ মাক্কী(রহঃ) বলেন , নিঃসন্দেহে এ কথা বলা চলে যে , রাসূল (সাঃ) ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু’আ করেছেন এবং মুক্তাদীগণ আ-মীন , আ-মীন বলেছেন , এরুপ কখনও দেখা যায় না । চার খলীফা থেকেও এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না । তাই এ ধরনের কাজ , যা রাসূল (সাঃ) করেননি , তাঁর সাহাবীগণ করেননি , নিঃসন্দেহে তা না করা উত্তম এবং করা বিদ’আত ।
(মাদখাল , ২য় খন্ড , পৃঃ ২৮৩)
৭।
মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ) বলেন , ফরয সালাতের পর ইমাম সাহেব দু’আ করবেন এবং মুক্তাদীগণ আ-মীন আ-মীন বলবেন , এ সম্পর্কে ইমাম আরফাহ এবং ইমাম গারবহিনী বলেন , এ দু’আকে সুন্নাত অথবা মুস্তহাব মনে করা না জায়েজ ।
(ইস্তিহবাবুদ দাওয়াহ পৃঃ৮)
৮।
মুফতী মুহাম্মাদ শফী (রাহঃ) বলেন , বর্তমানে অনেক মসজিদের ইমামদের অভ্যাস হয়ে গেছে যে , কিছু আবরী দু্’আ মুখস্থ করে নিয়ে সালাত শেষ করেই (দু’হাত উঠিয়ে ) ঐ মুখস্থ দু’আগুলি পড়েন । কিন্তু যাচাই করে দেখলে দেখা যাবে যে , এ দু’আগুলোর সারমর্ম তাদের অনেকেই বলতে পারে না । আর ইমামগণ বলতে পারলেও এটা নিশ্চিত যে , অনেক মুক্তাদী এ সম্স্ত দু’আর অর্থ মোটেই বুঝে না । কিন্তু না জেনে না বুঝে আ-মীন , আ-মীন বলতে থাকে । এ সমস্ত তামাশার সারমর্ম হচ্ছে কিছু শব্দ পাঠ করা মাত্র । প্রার্থনার যে রুপ বা প্রকৃতি , তা এতে পাওয়া যায় না ।
(মা’আরেফুল কুরআন , ৩য় খন্ড , পৃঃ ৫৭৭)
*
তিনি আরো বলেন , রাসূল (সাঃ) এবং সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেঈনে ইযাম হ’তে এবং শরীয়তের চার মাযহাবের ইমামগণ হ’তেও সালাতের পরে এ ধরনের মুনাজাতের প্রমাণ পাওয়া যায় না । সারকথা হ’ল , এ প্রথা পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের প্রদর্শিত পন্থা ও সাহাবায়ে কেরামের আদর্শের পরিপন্থি ।
(আহকামে দু’আ , পৃঃ ১৩)
৯।
মুফতী আযম ফয়যুল্লাহ হাটহাজারী(রহ) বলেন , ফরয সালাতের পর দু’আর চারটি নিয়ম আছে । (১) মাঝে মাঝে একা একা হাত উঠানো ব্যতীত হাদীসে উল্লিখিত মাসনুন দু’আ সমূহ পড়া । নিঃসন্দেহে তা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত । (২) মাঝে মাঝে একা একা হাত উঠিয়ে দু’আ করা । এটা কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয় । তবে কিছু যঈফ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত । (৩) ইমাম ও মুক্তাদীগণ সম্মিলিতভাবে দু’আ করা । এটা না কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত , না কোন যঈফ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত । (৪) ফরয সালাতের পর সর্বদা দলবদ্ধভাবে হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করার কোন প্রমাণ শরীয়তে নেই । না সাহাবী ও তাবেঈদের আমল দ্বারা প্রমাণিত , না হাদীস সমূহ দ্বারা , সহীহ হোক অথবা যঈফ হোক অথবা জাল হোক । আর না ফিক্বাহ এর কিতাবের কোন পাতায় লিখা আছে । এ দু’আ অবশ্যই বিদ’আত।
(আহকামে দু’আ , পৃঃ ২১)
১০।
পাকিস্থানের বিখ্যাত মুফতী আল্লামা রশীদ আহমাদ বলেন , রাসূল (সাঃ) প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পাঁচবার প্রকাশ্যে জামা’আত সহকারে পড়তেন । যদি রাসূল (সাঃ) কখনও সম্মিলিতভাবে মুক্তাদীগণকে নিয়ে মুনাজাত করতেন তাহলে নিশ্চয়ই একজন সাহাবী হলেও তা বর্ণনা করতেন । কিন্তু এতগুলো হাদীসের মধ্যে একটি হাদীসও এ মুনাজাত সম্পর্কে পাওয়া যায়নি । তারপর কিছুক্ষনের জন্য মুস্তাহাব মানলেও বর্তমানে যেরুপ গুরুত্ব দিয়ে করা হচ্ছে , তা নিঃসন্দেহে বিদ’আত ।
(আহসানুল ফাতাওয়া , ৩য় খন্ড ,পৃঃ ৬৮ )
*সবশেষে বলল,উত্তম হচ্ছে ছলাতের পরে হাত তুলে একা একা মুনাজাত করা,আর সম্মিলিত ভাবে মুনাজাত থেকে একদম বিরত থাকা।আর উল্লেখিত শর্ত মেনে কেউ যদি হাত তুলে মুনাজাত করে তাকে বিদ'আতি বলা যাবেনা।
আল্লাহু আ'লামু বিস সাওয়াব।
বা------ এই দিকে।।
ফরয সালাতের পরে সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দু’আ করা সম্বদ্ধে পৃথিবীর শ্রেষ্ট আলেমদের অভিমতঃ
(১) আহমাদ ইবনু তাইমিয়াহ (রাঃ) কে ফরয সালাতের পর ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে দু’আ করা জায়েয কি-না জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন , “সালাতের পর ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে দু’আ করা বিদ’আত । রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে এরুপ দু’আ ছিল না । বরং তার দু’আ ছিল সালাতের মধ্যে । কারণ সালাতের মধ্যে মুসল্লি স্বীয় প্রতিপালকের সাথে নীরবে কথা বলে আর নীরবে কথা বলার সময় দু’আ করা যথাযথ” । ( মাজমুআ ফাতাওয়া , ২২/ ৫১৯পৃঃ)
(২) শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহঃ) বলেন , “পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত ও নফল সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু’আ করা স্পষ্ট বিদ’আত । কারণ এরুপ দু’আ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে এবং তাঁর সাহাবীদের যুগে ছিল না । যে ব্যক্তি ফরয সালাতের পর অথবা নফল সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু’আ করে সে যেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের বিরোধীতা করে ।” (হাইয়াতু কেবারিল ওলামা ১/২৪৪পৃঃ)
তিনি আরো বলেন , “ইমাম-মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে দু’আ করার প্রমাণে রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে , কথা , কর্ম ও অনুমোদন ( কাওলী , ফে’লী , তাক্বরীরী) কোন হাদীস সম্পর্কে আমরা অবগত নই । আর একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আদর্শের অনুসরণেই রয়েছে সম্স্ত কল্যাণ । সালাত আদায়ের পর ইমাম-মুক্তাদির দু’আ সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) এর আদর্শ সুস্পষ্ট আছে , যা তিনি সালামের পর পালন করতেন । চার খলীফা সহ সাহাবীগণ এবং তাবেঈ গণ যথাযথভাবে তাঁর আদর্শ অনুসরণ করেছেন । অতঃপর যে ব্যক্তি তাঁর আদর্শের বিরোধীতা করবে , তাঁর আমল পরিত্যাজ্য হবে । রাসূল (সাঃ) বলেন , “যে ব্যক্তি আমার নির্দেশ ব্যতীত কোন আমল করবে , তা পরিত্যাজ্য ।” কাজেই যে ইমাম হাত তুলে দু’আ করবেন এবং মুক্তাদীগণ হাত তুলে আ-মীন আ-মীন বলবেন তাদের নিকট এ সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য দলীল চাওয়া হবে । অন্যথায় (তারা দলীল দেখাতে ব্যর্থ হ’লে) তা পরিত্যাজ্য ।” (হাইয়াতু কেবারিল ওলামা ১/২৫৭)
(৩) বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দীস আল্লামা শায়খ নাসিরউদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন , “দু’আয়ে কুনুতে হাত তুলার পর মুখে হাত মুছা বিদ’আত । সালাতের পরেও ঠিক নয় । এ সম্পর্কে যত হাদীস রয়েছে , এর সবগুলিই যঈফ । এজন্য ইমাম আযউদ্দীন বলেন , সালাতের পর হাত তুলে দু’আ করা মুর্খদের কাজ । (সিফাতু সালাতিন নাবী (সাঃ) পৃঃ ১৪১)
(৪) শায়খ উছায়মিন (রহঃ) বলেন , সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু’আ করা বিদ’আত । যার প্রমাণ রাসূল (সাঃ) ও তাঁর সাহাবীগণ থেকে নেই । মুসল্লিদের জন্য বিধান হচ্ছে প্রত্যেক মানুষ ব্যক্তিগতভাবে যিকির করবে । (ফাতাওয়া উছায়মিন , পৃঃ ১২০)
(৫) আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ) বলেন , ফরয সালাতের পর হাত তুলে দু’আ করা ব্যতীত অনেক দু’আই রয়েছে । (রফূস সামী , পৃঃ ৯৫)
(৬) আল্লামা আব্দুল হাই লাক্ষনৌভী (রহঃ) বলেন , বর্তমান সমাজে প্রচলিত প্রথা যে , ইমাম সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু’আ করেন এবং মুক্তাদীগণ আ-মীন , আ-মীন বলেন , এ প্রথা রাসূল (সাঃ) এর যুগে ছিল না । ফৎওয়া আব্দুল হাই , ১ম খন্ড , পৃঃ ১০০)
(৭) আল্লামা ইউসুফ বিন নূরী বলেন , অনেক স্থানেই এ প্রথা চালু হয়ে গেছে যে ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা হয় যা রাসূল সাঃ হতে প্রমাণিত নয় । (মা’আরেফুস সুনান , ৩য় খন্ড , পৃঃ ৪০৭)
(৮) আল্লামা আবুল কাশেম নানুতুবী (রহঃ) বলেন , ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা নিকৃষ্ট বিদ’আত । (এমদুদ্দীন , পৃঃ ৩৯৭)
(৯) আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন , ইমাম পশ্চিমমুখী হয়ে অথবা মুক্তাদী গণের দিকে ফিরে মুক্তাদী গণকে নিয়ে মুনাজাত করা কখনও রাসূল (সাঃ) এর তরীকা নয় । এ সম্পর্কে একটিও সহীহ অথবা হাসান হাদীস নেই । ( ইবনুল কাইয়্যেম , যাদুল মা’আদ , ১ম খন্ড ,পৃঃ নং ১৪৯ ‘ফরয সালাতের পর দু’আ করা সম্পর্কে লেখকের মতামত’ অনুচ্ছেদ )
(১০) আল্লামা মাজদুদ্দীন ফিরোযাবাদী (রহঃ) বলেন , ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর ইমামগণ যে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেন , তা কখনও রাসূল (সাঃ) করেননি । এবং এ সম্পর্কে কোন হাদীসও পাওয়া যায় না ।(ছিফরুস সা’আদাত , পৃঃ২০)
(১১) আল্লামা শাত্বেবী (রহঃ) বলেন , শেষ কথা হল এই যে , ফরয সালাতের পর সম্মিলিতভাবে রাসূল (সাঃ) নিজেও মুনাজাত করেননি , করার আদেশও দেননি । এমনকি তিনি এটা সমর্থন করেছেন , এ ধরনের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না । (আল-ইতেসাম ,১ম খন্ড , পৃঃ ৩৫২)
(১২) আল্লামা ইবনুল হাজ মাক্কী বলেন , নিঃসন্দেহে এ কথা বলা চলে যে , রাসূল (সাঃ) ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু’আ করেছেন এবং মুক্তাদীগণ আ-মীন , আ-মীন বলেছেন , এরুপ কখনও দেখা যায় না । চার খলীফা থেকেও এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না । তাই এ ধরনের কাজ , যা রাসূল (সাঃ) করেননি , তাঁর সাহাবীগণ করেননি , নিঃসন্দেহে তা না করা উত্তম এবং করা বিদ’আত । (মাদখাল , ২য় খন্ড , পৃঃ ২৮৩)
(১৩) মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ) বলেন , ফরয সালাতের পর ইমাম সাহেব দু’আ করবেন এবং মুক্তাদীগণ আ-মীন আ-মীন বলবেন , এ সম্পর্কে ইমাম আরফাহ এবং ইমাম গারবহিনী বলেন , এ দু’আকে সুন্নাত অথবা মুস্তহাব মনে করা না জায়েজ । (ইস্তিবাবুদ দাওয়াহ পৃঃ৮)
(১৪) মুফতী মুহাম্মাদ শফী (রাহঃ) বলেন , বর্তমানে অনেক মসজিদের ইমামদের অভ্যাস হয়ে গেছে যে , কিছু আবরী দু্’আ মুখস্থ করে নিয়ে সালাত শেষ করেই (দু’হাত উঠিয়ে ) ঐ মুখস্থ দু’আগুলি পড়েন । কিন্তু যাচাই করে দেখলে দেখা যাবে যে , এ দু’আগুলোর সারমর্ম তাদের অনেকেই বলতে পারে না । আর ইমামগণ বলতে পারলেও এটা নিশ্চিত যে , অনেক মুক্তাদী এ সম্স্ত দু’আর অর্থ মোটেই বুঝে না । কিন্তু না জেনে না বুঝে আ-মীন , আ-মীন বলতে থাকে । এ সমস্ত তামাশার সারমর্ম হচ্ছে কিছু শব্দ পাঠ করা মাত্র । প্রার্থনার যে রুপ বা প্রকৃতি , তা এতে পাওয়া যায় না । (মা’আরেফুল কুরআন , ৩য় খন্ড , পৃঃ ৫৭৭) তিনি আরো বলেন , রাসূল (সাঃ) এবং সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেঈনে ইযাম হ’তে এবং শরীয়তের চার মাযহাবের ইমামগণ হ’তেও সালাতের পরে এ ধরনের মুনাজাতের প্রমাণ পাওয়া যায় না । সারকথা হ’ল , এ প্রথা পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের প্রদর্শিত পন্থা ও সাহাবায়ে কেরামের আদর্শের পরিপন্থি । (আহকামে দু’আ , পৃঃ ১৩)
(১৫) মুফতী আযম ফয়যুল্লাহ হাটহাজারী বলেন , ফরয সালাতের পর দু’আর চারটি নিয়ম আছে । (১) মাঝে মাঝে একা একা হাত উঠানো ব্যতীত হাদীসে উল্লিখিত মাসনুন দু’আ সমূহ পড়া । নিঃসন্দেহে তা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত । (২) মাঝে মাঝে একা একা হাত উঠিয়ে দু’আ করা । এটা কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয় । তবে কিছু যঈফ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত । (৩) ইমাম ও মুক্তাদীগণ সম্মিলিতভাবে দু’আ করা । এটা না কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত , না কোন যঈফ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত । (৪) ফরয সালাতের পর সর্বদা দলবদ্ধভাবে হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করার কোন প্রমাণ শরীয়তে নেই । না সাহাবী ও তাবেঈদের আমল দ্বারা প্রমাণিত , না হাদীস সমূহ দ্বারা , সহীহ হোক অথবা যঈফ হোক অথবা জাল হোক । আর না ফিক্বাহ এর কিতাবের কোন পাতায় লিখা আছে । এ দু’আ অবশ্যই বিদ’আত (আহকামে দু’আ , পৃঃ ২১)
(১৬) পাকিস্থানের বিখ্যাত মুফতী আল্লামা রশীদ আহমাদ বলেন , রাসূল (সাঃ) প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পাঁচবার প্রকাশ্যে জামা’আত সহকারে পড়তেন । যদি রাসূল (সাঃ) কখনও সম্মিলিতভাবে মুক্তাদীগণকে নিয়ে মুনাজাত করতেন তাহলে নিশ্চয়ই একজন সাহাবী হলেও তা বর্ণনা করতেন । কিন্তু এতগুলো হাদীসের মধ্যে একটি হাদীসও এ মুনাজাত সম্পর্কে পাওয়া যায়নি । তারপর কিছুক্ষনের জন্য মুস্তাহাব মানলেও বর্তমানে যেরুপ গুরুত্ব দিয়ে করা হচ্ছে , তা নিঃসন্দেহে বিদ’আত । (আহসানুল ফাতাওয়া , ৩য় খন্ড ,পৃঃ ৬৮ )
(১৭) মাওলানা মওদুদী বলেন , এতে সন্দেহ নেই যে , বর্তমানে জামা’আতে সালাত আদায় করার পর ইমাম ও মুক্তাদী মিলে যে নিয়মে দু’আ করেন , এ নিয়ম রাসূল (সাঃ) এর যামানায় প্রচলিত ছিল না । এ কারণে বহুসংখ্যক আলেম এ নিয়মকে বিদ’আত বলে আখ্যায়িত করেছেন । ( আহসানুল ফাতাওয়া , ৩য় খন্ড , পৃঃ ৬৯৮)
(১৮) মাসিক মঈনুল ইসলাম পত্রিকার প্রশ্নোত্তর কলামে বলা হয়েছে , জামা’আতে ফরয সালাতান্তে ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদ’আত ও মাকরুহে তাহরীমী । কেননা সাহাবয়ে কেরাম , তাবেঈন , তাবে তাবেঈনদের কেউ এ কাজ শরী’আত মনে করে ‘আমল করেছেন বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না । তা নিশ্চয়ই মাকরুহ ও বিদ’আত । ( মাসিক মঈনুল ইসলাম , ছফর সংখ্যা ১৪১৩ হিঃ )
প্রকাশ থাকে যে , কোন কোন ‘আলেম ফরয সালাতান্তে হাত উঠিয়ে দু’আ করার প্রমাণে কিছু পুস্তক লিখলেও প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি বিতর্কিত নয় । সিদ্ধান্তহীনতার ফলে অথবা স্বার্থান্বেষী হয়ে আমরাই বিষয়টিকে বিতর্কিত করেছি । কারণ একথা সর্বজন বিদিত যে , রাসূল সাঃ , সাহাবীগণ ও তাবেঈগণ ইমাম-মুক্তাদী মিলে হাত উঠিয়ে কখনো দু’আ করেননি এবং পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় ‘আলিমগণ করেননি এবং বর্তমানেও করেন না । কাজেই এটি স্পষ্ট বিদ’আত ।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী ‘আমল করার তাওফীক দান করুন – আমীন !
0 Comments