পরিচ্ছদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - কবর যিয়ারত
এ অধ্যায়ে কবর যিয়ারতের বৈধতা, এর গুরুত্ব ও ফাযীলাত এবং এর নিয়ম-কানুন সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
১৭৬২-[১] বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। (কিন্তু এখন) তোমাদেরকে কবর যিয়ারতের অনুমতি দিচ্ছি। (ঠিক) এভাবে আমি তোমাদেরকে কুরবানীর গোশ্ত (গোশত/গোস্ত/গোসত) তিন দিনের বেশী জমা করে রাখতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু এখন তোমরা যতদিন খুশী তা রাখতে পারো। আর আমি তোমাদেরকে ‘নাবীয (নামক শরাব) মশক ছাড়া অন্য কোন পাত্রে রেখে পান করতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু এখন তোমরা তা যে কোন পাত্রে রেখে পান করতে পার। তবে সাবধান! নেশা এনে দেয় এমন কোন দ্রব্য কখনো পান করবে না। (মুসলিম)[1]
[1] সহীহ : মুসলিম ৯৭৭, আবূ দাঊদ ৩৬৯৮, নাসায়ী ২০৩২, আহমাদ ২২৯৫৮, ইবনু হিব্বান ৫৪০০, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ২৪৭৫
ব্যাখ্যা: এ হাদীসটি এ দিকে ইঙ্গিত বহন করছে যে, ইসলামের প্রথম দিকে কবর যিয়ারত করা বৈধ ছিল না। পরবর্তীতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারতের অনুমতি দিয়েছেন। এ ছাড়া আরো এমন কতিপয় বিষয় সম্পর্কে এ হাদীসে বলা হয়েছে, যা ইসলামের প্রথম যুগে অবৈধ ছিল পরবর্তীতে তা বৈধ করা হয়েছে।
ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলেন এবং পরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেই কবর যিয়ারত করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
মুল্লা ‘আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন, এ নির্দেশ অনুমতি ও মুস্তাহাবের জন্য।
ইবনু ‘আবদুল বার কতিপয় ‘আলিমের বরাত দিয়ে বলেন, এ নির্দেশ ওয়াজিবের জন্য।
হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) তার ফাতহুল বারী কিতাবে বলেছেন, এ হাদীস কবর যিয়ারতের জায়িয বিধানকে সুস্পষ্ট করেছে। এ হাদীসের মাধ্যমে কবর যিয়ারতের নিষেধাজ্ঞা রহিত করা হয়েছে।
ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, আবদারী ও হাযিমীসহ অধিকাংশ ‘উলামায়ে কিরাম একমত হয়েছেন যে, পুরুষের জন্য কবর যিয়ারত জায়িয তথা বৈধ। অনুরূপভাবে অনেকে এটাকে মাকরূহ বলেছেন।
ইবনু আবী শায়বাহ্ ইবনু সীরীন, ইবরাহীম নাখ‘ঈ ও শা‘বী থেকে বর্ণনা করেছেন, সাধারণভাবে কবর যিয়ারত করা মাকরূহ।
শা‘বী (রহঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি কবর যিয়ারত করতে নিষেধ না করতেন তাহলে আমি আমার মেয়ের কবর যিয়ারত করতাম।
এর বিপরীতে ইবনু হাযম-এর কথা হল, জীবনে একবার হলেও কবর যিয়ারত করা ওয়াজিব।
মহিলাদের কবর যিয়ারত করার ব্যাপারে ইখতিলাফ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, নারী-পুরুষ সকলের জন্য কবর যিয়ারত করা জায়িয। আবার কেউ কেউ বলেন, এটা পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট। সুস্পষ্ট বর্ণনা থেকে যেমনটি পাওয়া যায়।
ইসলামের প্রথম দিকে কবর যিয়ারত নিষিদ্ধ থাকার কারণ হল যে, তারা ইতোপূর্বে জাহিলী যুগের মধ্যে ছিল। তারা বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা-আর্চনা করত। তাই কবর যিয়ারত এ আশঙ্কায় নিষেধ করা হল যে, তারা জাহিলী যুগের মতো কবরবাসীর কাছে কিছু প্রার্থনা করে না বসে। এছাড়া এ আশংকাও ছিল যে, যিয়ারতকারী কবরবাসীর ইবাদাতে লিপ্ত হতে পারে, বিপদ দূর করার জন্য তার কাছে প্রার্থনা করতে পারে, তার কাছে প্রয়োজন মিটানোর জন্য প্রার্থনা করতে পারে। এ সব আশংকায় প্রথম দিকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করা হয়। অতঃপর যখন তারা তাওহীদের ব্যাপারে সুদৃঢ় হল, তখন তাদেরকে কবর যিয়ারতের অনুমতি দেয়া হল।
আল্লামা বাদরুদ্দীন আয়নী (রহঃ) বলেন, কবর যিয়ারত ইসলামের প্রথম দিকে নিষেধ ছিল। কেননা এ সকল লোক (মুসলিম) কিছু কাল আগে মূর্তি পূজায় অভ্যস্ত ছিল। তারা কবরকে ‘ইবাদাতখানা হিসেবে গ্রহণ করেছিল। অতঃপর যখন ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হল ঈমানের পক্ষে মানুষের অন্তর দৃঢ় হল তখন কবর যিয়ারতের নিষেধাজ্ঞা রহিত করা হল। কেননা কবর যিয়ারত আখিরাতের কথা মনে করিয়ে দেয় আর দুনিয়া ত্যাগী বানিয়ে দেয়।
ইসলামের প্রথম দিকে কুরবানীর গোশ্ত (গোশত/গোস্ত/গোসত) তিন দিনের বেশী রেখে খাওয়া নিষেধ ছিল। এ নিষেধাজ্ঞার কারণ হল তখন অনেক অসহায় লোক মাদীনায় এসে আশ্রয় গ্রহণ করত। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করণার্থে এ নিষেধাজ্ঞা করা হয়েছিল।
আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, তাদের জন্য নিষেধ ছিল কুরবানীর বাকী গোশ্ত (গোশত/গোস্ত/গোসত) তিনদিনের বেশী রেখে খাওয়া। এর দ্বারা তাদের ওপর সদাক্বাকে ওয়াজিব করা হয়েছে। অতঃপর সমস্যা দূর হয়ে গেলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন।
পরিচ্ছদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - কবর যিয়ারত
১৭৬৩-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার নিজের মায়ের ক্ববরে গেলেন। সেখানে তিনি নিজেও কাঁদলেন এবং তাঁর আশেপাশের লোকদেরকেও কাঁদালেন। তারপর বললেন, আমি আমার মায়ের জন্য মাগফিরাত কামনা করতে আল্লাহর কাছে অনুমতি চাইলাম। কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হলো না। তারপর আমি আমার মায়ের ক্ববরের কাছে যাওয়ার অনুমতি চাইলাম। আমাকে অনুমতি দেয়া হলো। তাই তোমরা ক্ববরের কাছে যাবে। কারণ কবর মৃত্যুর কথা মনে করিয়ে দেয়। (মুসলিম)[1]
[1] সহীহ : মুসলিম ৯৭৬, আবূ দাঊদ ৩২৩৪, নাসায়ী ২০৩৪, ইবনু মাজাহ্ ১৫৭২, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৩৯০, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫৪২।
ব্যাখ্যা: রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা ও মাদীনার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত আব্ওয়া নামক স্থানে স্বীয় মায়ের কবর যিয়ারত করেন। এটা ছিল মক্কা বিজয় সময়কার ঘটনা। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক মায়ের ক্ববরের পাশে কান্নার কারণ হল যে, তার মায়ের ওপর ‘আযাব হচ্ছিল। এ হাদীসটি কবরস্থানে কান্না করা জায়িযের ব্যাপারে দলীল। অর্থাৎ কবরস্থানে উপস্থিত হয়ে কান্না করা জায়িয।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মায়ের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুমতি চাইলেন, কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাকে এ ব্যাপারে অনুমতি দিলেন না। এ অনুমতি না দেয়ার কারণ সম্পর্কে ‘উলামায়ে কিরাম বিভিন্ন মত পেশ করেছেন।
ইবনু মালিক (রহঃ) বলেন, কেননা তাঁর মা ছিলেন কাফির। আর কাফিরের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নাজায়িয। কারণ আল্লাহ তা‘আলা কখনো তাদেরকে ক্ষমা করবেন না।
আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন, এ হাদীস এ ব্যাপারে দলীল যে, যারা ইসলামী আদর্শের বাইরে ইন্তিকাল করবে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা অবৈধ তথা নাজায়িয।
ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, এর দ্বারা কাফিরদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করাকে নিষেধ করা হয়েছে।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কাছে স্বীয় মায়ের কবর যিয়ারতের অনুমতি চাইলে আল্লাহ তাকে এ ব্যাপারে অনুমতি দিলেন।
ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, মুশরিকদের সাথে তাদের জীবদ্দশায় সাক্ষাত করা জায়িয এবং মৃত্যুর পর কবর যিয়ারত করা জায়িয। কেননা যখন মৃত্যুর পর জায়িয তাহলে জীবিত অবস্থায় সাক্ষাত করাতো আরো উত্তম।
আল্লাহ তা‘আলা মাতা-পিতা সম্পর্কে বলেন, ‘‘দুনিয়াতে তারা দু’জন সন্তানের জন্য উত্তম সাথী।’’ (সূরাহ্ লুক্বমান ৩১ : ১৫)
গ্রন্থকার বলেন, আমি বলবঃ এ হাদীস এ কথা নির্দেশ করছে যে, তাঁর মা ইসলামের উপর মারা যাননি।
ইমাম নাবাবী (রহঃ) ও ইবনু মাজাহ স্ব স্ব কিতাবে এ হাদীসকে যে অধ্যায়ের মধ্যে উল্লেখ করেছেন তার নাম করেছেন باب زيارة قبر المشرك অর্থাৎ মুশরিকের কবর যিয়ারত সংক্রান্ত অধ্যায়।
পরিচ্ছদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - কবর যিয়ারত
১৭৬৪-[৩] বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরস্থানে গেলে এ দু‘আ পড়তে শিখিয়েছেনঃ ‘‘আস্সালা-মু ‘আলায়কুম আহলাদ দিয়া-রি মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা ওয়া ইন্না- ইনশা-আল্ল-হু বিকুম লালা-হিকূনা নাসআলুল্ল-হা লানা- ওয়ালাকুমুল ‘আ-ফিয়াহ্’’ (অর্থাৎ হে কবরবাসী মু’মিন ও মুসলিমগণ! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ অবশ্যই আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হচ্ছি। আমরা আমাদের ও তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।)। (মুসলিম)[1]
[1] সহীহ : মুসলিম ৯৭৫, নাসায়ী ২০৪০, ইবনু মাজাহ্ ১৫৪৭, আহমাদ ২২৯৮৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭২১২, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৫১, ইরওয়া ৭৭৬।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
ব্যাখ্যা: এ হাদীসের মধ্যে কবর যিয়ারতের নিয়ম-কানুন জানা যায়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন কবরস্থানের উদ্দেশে বের হতেন, তখন তিনি সাহাবীদেরকে শিক্ষা দিতেন অর্থাৎ কবরস্থানে পৌঁছে কি বলতে হবে তা শিক্ষা দিতেন। আর তা হল
اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ اَهْلَ الدِّيَارِ... وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ
আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে শিক্ষা দিতেন যে, কিভাবে কবরবাসীকে সালাম দিতে হবে। আর এটা এজন্য যে, জাহিলী যুগের লোকেরা আগে নাম বলত এবং পরে নাম বলত।
আল্লামা খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, মৃতের ওপর সালাম দিতে হবে সেভাবে, যেভাবে জীবিত ব্যক্তির ওপর সালাম দেয়া হয়। এ সালাম দু‘আ পাঠের পূর্বে। অর্থাৎ কবর যিয়ারত শুরু হবে সালাম দিয়ে। সালামের ক্ষেত্রে নাম পরে আসবে, সালাম আগে হবে। অর্থাৎ عَلَيْكَ سَّلَامُ اللهِ না হয়ে اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ হবে।
এ ব্যাপারে কুরআন মাজীদে একাধিক স্থানে দলীল পাওয়া যায়। সূরাহ্ হূদ-এর ৭৩ নং আয়াতে রয়েছে যে, رَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكتُهٗ عَلَيْكُمْ اَهْلَ الْبَيْتِ সূরাহ্ আস্ সা-ফ্ফা-ত এর ১৩০ নং আয়াতে রয়েছে سَلَامٌ عَلى اِلْ يَاسِيْنَ
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরবাসীকে اهل الديار বলার কারণ হল যে, আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবিত ব্যক্তি সাথে তুলনা করে তাদেরকে اهل الديار বলেছেন। অর্থাৎ জীবিতরা যেমন এক সাথে বাস করে, ঠিক তেমনি মৃতরাও কবরস্থানে একত্রে বসবাস করে।
এ হাদীসের মাধ্যমে বুঝা যাচ্ছে যে, কবরবাসীদের মধ্যে মু’মিন ও মুসলিমের জন্য সালাম প্রযোজ্য। যদি এর মধ্যে কোন মুনাফিক্ব থাকে তাহলে তাকে সালাম দেয়া যাবে না।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি আল্লাহ চান তাহলে আমরা তোমাদের সাথে মিলিত হব অর্থাৎ ইন্তিকালের মাধ্যমে তোমাদের সাথে কবর জগতে মিলিত হব। এখানে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শর্ত যুক্ত করার কারণ হল, এর দ্বারা বারাকাত লাভ করা ও নিজেকে সোপর্দ করা। আর আল্লাহ তা‘আলা انشاء الله (ইনশা-আল্ল-হ) ছাড়া কোন কথা বলতে নিষেধ করেছেন।
আমরা আমাদের জন্য এবং তোমাদের ক্ষমার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করব। এর দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় যে, কবরবাসীকে সালাম দেয়া এবং তাদের জন্য দু‘আ করা উভয়ই মুস্তাহাব কাজ। এ হাদীসটি মুসলিম ছাড়াও মুসনাদে আহমাদ, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ কিতাবে বর্ণিত আছে।
পরিচ্ছদঃ ৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কবর যিয়ারত
১৭৬৭-[৬] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! কবর যিয়ারতে আমি কি বলব? তিনি বললেন, তুমি বলবে,
‘‘আস্সালা-মু ‘আলা- আহলিদ দিয়া-রি মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা, ওয়া ইয়ারহামুল্ল-হুল মুসতাক্বদিমীনা মিন্না- ওয়াল মুস্তা’খিরীনা, ওয়া ইন্না- ইনশা-আল্ল-হু বিকুম লালা-হিকূন’’
(অর্থাৎ সালাম বর্ষিত হোক মু’মিন মুসলিমের বাসস্থানের অধিবাসীদের প্রতি! আর আল্লাহ আমাদের রহম করুন যারা প্রথমে চলে গেছে আর যারা পরে আসবে তাদের উপর, ইনশাআল্লাহ আমরাও শীঘ্রই তোমাদের সাথে মিলিত হব।)। (মুসলিম)[1]
[1] সহীহ : মুসলিম ৯৭৪, নাসায়ী ২০৩৭, ইবনু হিব্বান ৭১১০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭২১১, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৪৪২১।
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে কবরবাসীকে সালাম দেয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জানতে চাইলেন যে, হে আল্লাহর রসূল! আমি কবরস্থানে গিয়ে কিভাবে কবরবাসীকে সালাম প্রদান করব। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি বলবে- اَلسَّلُامَ عَلى اَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُوْمِنِيْنَ অর্থাৎ সমস্ত মু’মিন মুসলিম ঘরবাসীর উপর শান্তি বর্ষিত হোক। এখানে নারীর ওপর পুরুষকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আর যারা মৃত্যু দ্বারা আমাদের আগে কবরবাসী হয়েছে এবং যারা আমাদের পরে হবে তাদের সকলের প্রতি আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ বর্ষিত হোক। অর্থাৎ আমাদের মধ্যে যারা মৃত এবং যারা জীবিত সকলের ওপর আল্লাহর রহমাত বর্ষিত হোক। এ হাদীস ঐ ব্যক্তির স্বপক্ষে দলীল, যে নারীর অধিকার রক্ষার্থে শর্তসাপেক্ষে তাদের কবর যিয়ারতকে বৈধ বলে থাকেন। অর্থাৎ এ হাদীস মহিলাদের কবর যিয়ারতকে জায়িয করেছে। এ হাদীসটি সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে এবং এটা নাসায়ী ও বায়হাক্বীতেও বর্ণিত হয়েছে।
0 Comments